ফ্যাসিবাদ ফেরানোর প্রেক্ষাপট তৈরিতে মরিয়া কিছু সাংবাদিক ও গণমাধ্যম : মাহমুদুর রহমান

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে আবার ফ্যাসিবাদ ফিরিয়ে আনার প্রেক্ষাপট তৈরি করতে কিছু সাংবাদিক ও কয়েকটি গণমাধ্যম মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনজন সাংবাদিকের একজন উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করার ধরন এবং একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম একইসূত্রে গাঁথা।
শনিবার (৩ মে) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে 'বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস' উপলক্ষে আলোচনা সভায় মাহমুদুর রহমান এসব কথা বলেন।
ভারতীয় আগ্রাসন ফিরিয়ে আনার প্রেক্ষাপট তৈরিকারীদের থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, নেগেটিভ ন্যারেটিভের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কাউন্টার ন্যারেটিভ প্রচার করতে হবে। যারা দেশের স্বাধীনতা, জনগণের স্বাধীনতা চায়, তাদের এই ন্যারেটিভের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে কীভাবে ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছে, সেই ন্যারেটিভ প্রচারের ফল হচ্ছে ১/১১-এর সরকার। ওই সরকার ছিল ভারতের দালাল। ওয়ান ইলেভেনের সরকারকে সবসময় ভারতের দালাল সরকার বলেছি, এখনো বলবো। মঈনউদ্দিন, মাসুদ, ফখরুদ্দিনের সরকার ছিল ভারতের দালাল। ওই সরকারকে আমি কখনো স্বীকার করিনি, করবোও না।
মাহমুদুর রহমান বলেন, আপনারা জানেন, ন্যারেটিভ সরকারের উদ্দেশ্য এমনই থাকে। এখনই যে ন্যারেটিভ তৈরি করার উদ্দেশ্যে তিনজন সাংবাদিক একজন উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেছিলেন এবং একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম একইসূত্রে গাঁথা। এটার উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশে আবার ফ্যাসিবাদ ফিরিয়ে আনার একটা প্রেক্ষাপট তৈরি করা, আবার ভারতীয় আগ্রাসন ফিরিয়ে আনার একটা প্রেক্ষাপট তৈরি করা। যারা দেশের স্বাধীনতা, জনগণের স্বাধীনতা চায়, এই ন্যারেটিভের বিষয়ে তাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের যেসব সংবাদমাধ্যম আছে তাদের এই ন্যারেটিভের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরি করতে হবে। এটা কিন্তু দৈনিক আমার দেশ প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে।
দৈনিক আমার দেশ-এর লিড নিউজের প্রসঙ্গ টেনে মাহমুদুর রহমান বলেন, আমার দেশ পত্রিকা প্রতিদিন বাংলাদেশের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে, জনগণের পক্ষে ন্যারেটিভ তৈরি করছে। আমি মনে করি এই কাজ শুধু আমার দেশ-এর নয়, প্রত্যেকটি দেশপ্রেমিক মিডিয়ার। আমরা দেশপ্রেমিক মিডিয়া যদি কলমের লড়াই চালাই, তাহলে নেগেটিভ ন্যারেটিভ পরাজিত হবে।
আমার দেশ সম্পাদক বলেন, আমি কলমের লড়াই কলম দিয়ে দিতে চাই। ওরা কিন্তু কলমের জবাব গায়ের জোরে দিয়েছে। সেটা কীভাবে দিয়েছে? আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে। আমাকে জেলে নিয়ে গেছে, হত্যা করার চেষ্টা করেছে। আমি বলবো, তুমি কলাম লিখবে, আমিও লিখবো, জনগণই ঠিক করবেন কার লেখা সঠিক।
অনুষ্ঠানে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে তিনি বলেন, ১৫ বছরের শাসনামলে দেশে ৬৫জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার-এর প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন করে তিনি আরও বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৪ এর জুন পর্যন্ত গণমাধ্যমের ৩৩৬৯ জন সাংবাদিক নানাভাবে রোষের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে ২১ জনকে হত্যা, ১৫১০ জন আহত, ৪৭৮ জনকে মারধর, ২২১ জনের ওপর হামলা, ৬৬ জন গ্রেফতার, ৭ জন গুম, ৪৭৫ জনকে হুমকি, ৭ জনকে নির্যাতন এবং ৪২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পেশাজীবী সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন ডিইউজে ও বিএফইউজের হিসাব অনুযায়ী বিগত ১৫ বছরের শাসনামলে দেশে ৬৫জন সাংবাদিক নিহত হন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড এ সময়ের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ঘটনা। সাংবাদিক সহকর্মীরা গত ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ এ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছর পালন করেছে। সাগর-রুনি হত্যার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিরা ধরা পড়বে। কিন্তু ১৫৮ মাসেও খুনি চক্রের টিকিটির পর্যন্ত নাগাল পাওয়া সম্ভব হয়নি।
আলোচনা সভায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলমের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, সিনিয়র সহকারী মহাসচিব বাছির জামালসহ সাংবাদিক নেতারা।