গ্যাস-বিদ্যুতের দাম আপাতত বাড়াচ্ছে না সরকার : জ্বালানি উপদেষ্টা
‘সরকার যে মূল্যে গ্যাস আমদানি করে সেই তুলনায় গ্যাসের দাম অনেক কম। তবুও আপাতত গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না।’
আজ বুধবার (৭ মে) সচিবালয়ে শিল্পে গ্যাস সংকট নিয়ে শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, সংকট মেটাতে শিল্পে বাড়তি ২৫ কোটি ঘনফুট (২৫০ মিলিয়ন ঘন ফুট-এমএমসিএফডি) গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পত্র-পত্রিকায় লেখা হয়েছে গ্যাস সরবরাহের অপ্রতুলতায় শিল্প উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে। এই পরিস্থিতিটা সম্পর্কে আমরা জানি বলেও মন্তব্য করেছেন ফাওজুল কবির খান।
বড় শিল্প উদ্যোক্তা যারা রয়েছেন, আজকে তারা এখানে ছিলেন উল্লেখ করে ফাওজুল কবির খান বলেন, আমরা সবাই মিলে এটা নিয়ে আলাপ করেছি। নতুন নতুন শিল্প হয়েছে। আমরা কিন্তু গ্যাসের সরবরাহ কমাইনি। এখন যে ওনাদের (ব্যবসায়ী) আমেরিকার রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফের কারণে সমস্যা হচ্ছে, এজন্য আমরা এটা সম্পর্কে খুব সংবেদনশীল। এজন্য আমরা কতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে যে গ্যাস দেওয়া হতো, সেখান থেকে আমরা ১৫ কোটি ঘনফুট (১৫০ এমএমসিএফডি) গ্যাস বিদ্যুতের পরিবর্তে শিল্পে দেব। এটা হচ্ছে আমাদের প্রথম সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে, মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত অতিরিক্ত চারটি এলএনজি কার্গো আনব। এতে আরও ১০ কোটি ঘনফুট (১০০ এমএমসিএফডি) গ্যাস। সুতরাং সর্বমোট শিল্পে গ্যাসের বরাদ্দ ২৫০ কোটি ঘনফুট বাড়বে। বরাদ্দের ক্ষেত্রে আমরা শিল্প এলাকায় দেব। আমরা একমত হয়েছি যে, কাজগুলো আমরা একসঙ্গে করব। শিল্প এলাকাগুলো ওনারা (ব্যবসায়ী) চিহ্নিত করে দেবেন। সেইগুলোতে আমরা সরবরাহ বাড়াব এবং এগুলো ক্রমাগত তদারকি করব।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘শিল্পদ্যোক্তারা আমাদের আরেকটা কথা জানিয়েছেন, অবৈধ সংযোগের কারণে ওনারা অনেক ক্ষেত্রে গ্যাস পান না। এ বিষয়ে একটা জয়েন্ট টাস্কফোর্স হবে। সেই টাস্কফোর্সের সঙ্গে কাজ করে খুব দ্রুত এই অবৈধ সংযোগগুলো বিছিন্ন করব। আমরা আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিশেষ করে তিতাস গ্যাস একটা অনলাইন সেটআপ করবে। শিল্প কারখানায় ফিল্ড ভিজিটের মাধ্যমে আমরা যে বাড়তি গ্যাস দিলাম, এর ফলে যে তাদের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে—এটি নিশ্চিত করব। এ ছাড়া আগামী বছর ১০০টি কূপ খনন করা হবে।’
ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, ‘ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় নতুন কূপের অনুসন্ধান করব। আমরা ইতোমধ্যে ওনাদের (ব্যবসায়ী) জানিয়েছি তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে কাজ করে আমরা ২৭ এমএমসিএফডি নতুন গ্যাস পেয়েছি। এগুলো কিন্তু পাইপলাইনে এসে গেছে। আমরা গ্যাস অনুসন্ধানে নজর দিচ্ছি। আমরা ৫০টা কূপ খনন করছি, এটা যদি সফল হয় তবে সেখান থেকে আরও ৫০০ এমএমসিএফডি গ্যাস আনতে পারব।
ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, ভোলাতে নতুন করে সিসমিক সার্ভে ও ড্রিলিং করা হচ্ছে। আমরা রিগ (গ্যাস অনুসন্ধান যন্ত্র) কিনছি। এখন যে রিগগুলো আছে সেগুলো গভীরে যায় না। এজন্য আমরা একটি ডিপ রিগ কিনছি। আমরা বিবিয়ানার পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন।
বাপেক্স ছাড়াও আমরা উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এই খননের কাজ করব মন্তব্য করে ফাওজুল কবির খান বলেন, ইতোমধ্যে ভোলায় পাঁচটি কূপের টেন্ডার দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘সাতজন বিডার দরপত্র কিনেছিলেন। আমরা তাদের বলেছি, দরপত্র তো কিনলেন, কিন্তু জমা কেন দিলেন না। তাদের ফিডব্যাক আমরা পেয়েছি। একটি কমিটি সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। ডকুমেন্টটা মোডিফিকেশন করা হচ্ছে, টেন্ডারটা আবার আহ্বান করা হবে।’
এ সময় ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, আমরা যে নতুন মূল্যে গ্যাস আনি সেই তুলনায় গ্যাসের দাম অনেক কম। তবুও আমরা আপাতত গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। বিদ্যুতের কোনো মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না।’
বিদ্যুৎ থেকে গ্যাস নিয়ে শিল্পে দিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়ে লোডশেডিং বাড়বে কি না-এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘বিদ্যুৎ থেকে গ্যাস কাট করলে সেই ঘাটতিটা পূরণে তখন আমরা তরল জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালাব। এখন আমরা সেগুলো চালাচ্ছি, তবে সেই পরিমাণে চালাচ্ছি না। তখন হয়তো আমরা একটু বেশি পরিমাণে চালাব। আমরা রমজানের সময় বিদ্যুৎকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। সেচকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। এখন যে বাম্পার ফলনের কথা বলছেন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এর অন্যতম কারণ। এখন আমরা সেই অগ্রাধিকারটা শিল্পকে দেব।’
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।