ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উৎসাহ দিলেন ডা. জুবাইদা রহমান

দেশের তরুণ প্রজন্ম এবং ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উৎসাহ দিয়েছেন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) ভাইস প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট ডা. জুবাইদা রহমান। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানে সহধর্মিণী।
আজ শুক্রবার (২৩ মে) বিকেলে জেডআরএফ কার্যালয়ে ‘ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলা-২০২৪’ এর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ডা. জুবাইদা।
অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোর তথা ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে ডা. জুবাইদা রহমান বলেন, প্রত্যেক প্রতিযোগীকে তাদের অভিনব বিজ্ঞান প্রজেক্টের জন্য জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন।’ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচিতে বক্তব্য দিলেন তিনি।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে গত ৬ মে দেশে ফিরেন ডা. জুবাইদা রহমান। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন তিনি। এরপর ১৭ বছর কেটে গেলেও দেশে ফিরতে পারেননি। স্বামী তারেক রহমান ও একমাত্র সন্তান ব্যারিস্টার জায়মা রহমানকে নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছিলেন তিনি।
আজ বিজ্ঞান মেলায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার পর জেডআরএফের বোর্ড অব ডিরেক্টরস কমিটির সদস্য এবং উপদেষ্টাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জুবাইদা রহমান। অনুষ্ঠানে জেডআরএফফের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মেলায় প্রতিযোগী ও বিজয়ীদের উদ্দেশে ডা. জুবাইদা রহমান বলেন, ‘ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের মেধা, অধ্যবসায় ও আত্মনির্ভরশীলতা সত্যিই অসাধারণ এবং আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। আমি প্রত্যাশা করি, তোমরা তোমাদের জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে স্বার্থক হও এবং বিশ্বের দরবারে দেশের মুখ উজ্জ্বল করো। বিজ্ঞানের প্রতি তোমাদের যে মমত্ববোধ, সেটি দেখে আশা করি ভবিষ্যতে তোমরা বিজ্ঞানের জগতে উদ্ভাবন করে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের জন্য কিছু করবে। ইনশআল্লাহ আমাদের সবার সহযোগিতা থাকবে।’
ডা. জুবাইদা আরও বলেন, ‘বিজ্ঞানের জগতে যেকোনো সময় যেকোনো রকম প্রশ্ন তোমাদের থাকলে সে বিষয়ে তোমরা বিচারকমণ্ডলীর কাছে যেতে পারো। তারা তোমাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন। বিজ্ঞান চর্চার কোনো শেষ নেই। এর মাধ্যমে পৃথিবীকে অনেক কিছু দেওয়ার আছে। আমার বিশ্বাস, তোমরা তা পারবে। তোমরা ভবিষ্যতে ইনশআল্লাহ নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বার্থক হয়ে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করবে।’ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।
জেডআরএফের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের ভার্চুয়াল সভাপতিত্বে এবং ডাইরেক্টর (প্রোগ্রাম) ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন জেডআরএফের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান। স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান বলেন, যেসব ক্ষুদে বিজ্ঞানী ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলায় অংশ নিয়েছে এবং বিজয়ী হয়েছে তারাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। তাদের জন্য অনেক অনেক দোয়া ও শুভকামনা। এরপর তিনি ডা. জুবাইদা রহমানকে ক্রেস্ট ও ফুলের তোড়া দিয়ে সংগঠনের কার্যালয়ে স্বাগত জানান।
মূলত শিশু-কিশোর ও নতুন প্রজন্মের মাঝে বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন ও সর্বোতভাবে বিজ্ঞান চর্চার অনুপ্রেরণাকে লক্ষ্য করে গত চার বছর ধরে ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। আর জেডআরএফের এই ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলা ডা. জুবাইদা রহমানের মস্তিষ্কপ্রসূত ধারণা। মেলায় বিজয়ী ১৭ জনের মাঝে পুরস্কার (ল্যাপটপ) ও সনদ বিতরণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার বলেন, বিজ্ঞান মেলাটি ছিল অত্যন্ত আনন্দের। বিগত স্বৈরাচার সরকার দেশে বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে মনযোগ দেয়নি। এমন সময়ে ডা. জুবাইদা রহমান তার নিজ উদ্যোগে ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলার ধারণা দেন। শেষ পর্যন্ত সেটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছেও। শিশু-কিশোররা বিভিন্ন প্রজেক্ট তৈরির মাধ্যমে তাদের মেধার প্রমাণ দিয়েছে।
ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলার বিশেষ সমন্বয়ক ড. এস এম সোহাগ আউয়াল বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব বিজ্ঞানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে। এখান থেকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। একটু প্রচেষ্টা করলে বাংলাদেশকে আধুনিক হিসেবে রূপ দিতে পারব। আজকের ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের হাতে এগিয়ে যাবে দেশ এই প্রত্যাশা করছি। চায়না, কোরিয়াসহ অসংখ্য দেশ বিজ্ঞানকে কেন্দ্র করে এগিয়ে গেছে।’
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার (ভার্চুয়ালি) বলেন, ‘ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলা যে সম্ভব সেটি প্রমাণিত করেছেন জেডআরএফের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. জুবাইদা রহমান। আগামীতে সশরীরে বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হবে ইনশাআল্লাহ।’
ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলার ‘ক’ গ্রুপের বিজয়ী জায়ান মো. হামজা বলেন, ‘জেডআরএফের ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলা একটি অসাধারণ উদ্যোগ। যা আমাদেরকে বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ করে দিয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের কথা আমি কখনো ভুলতে পারব না।’
‘খ’ গ্রুপের বিজয়ী কাইসান আহিয়ান রেজা বলেন, ‘জেডআরএফের ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলার কারণে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।’
‘গ’ গ্রুপের বিজয়ী নুসরাত মিথিলা বলেন, ‘ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলার মাধ্যমে আমি বিজ্ঞান চর্চায় আরো একধাপ এগিয়ে যাই এবং জেডআরএফ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। জেডআরএফকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। এমন সৃজনশীল উদ্যোগ যাতে ভবিষ্যতে চলমান থাকে সেই প্রত্যাশা করছি, যাতে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে ভুমিকা রাখবে।’
ডাইরেক্টর ও উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়
গতকাল জেডআরএফের কার্যালয়ে ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার দেওয়ার পাশাপাশি সংগঠনের বোর্ড অব ডাইরেক্টরস ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তারেক রহমানকে প্রেসিডেন্ট ও ডা. জুবাইদা রহমানকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করে ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর ২৩ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ ‘বোর্ড অব ডাইরেক্টরস কমিটি’ গঠন করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)। এ ছাড়া সাত সদস্যের একটি উপদেষ্টা পরিষদও গঠন করা হয়েছে।
গতকাল অনুষ্ঠানে পরিচালকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন—অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহা. শামীম (ফাইন্যান্স), ডা. সৈয়দা তাজনীন ওয়ারিস সিমকী (প্ল্যানিং), কৃষিবিদ খন্দকার মাহফুজুল হক বাচ্চু (প্রোগ্রাম), প্রকৌশলী মাহবুব আলম (প্রোগ্রাম), অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান (প্রোগ্রাম), অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী (প্রোগ্রাম), আমিরুল ইসলাম কাগজী (প্রোগ্রাম), অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, কৃষিবিদ আনোয়ারুননবী মজুমদার বাবলা, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, অধ্যাপক ড. শেখ মনির উদ্দিন, প্রকৌশলী এ কে এম জহিরুল ইসলাম, কৃষিবিদ শফিউল আলম দিদার, প্রকৌশলী উমাশা উমায়ন মনি চৌধুরী ও সাংবাদিক হাফিজ আল আসাদ সাঈদ খান।

উপদেষ্টাদের মধ্যে ছিলেন—ডা. এ এস হায়দার পারভেজ, কৃষিবিদ অধ্যাপক ড. আব্দুল করিম, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী ও প্রকৌশলী আলমগীর হাসিন আহমেদ। এ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ কে এম শামসুল ইসলাম শামস, তারেক রহমানের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী মিয়া নূরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু, মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর আহমেদ, অ্যাডভোকেট মেহেদুল ইসলাম, জেডআরএফের ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. মাসুদ আখতার জীতু, ডা. সাজিদ ইমতিয়াজ, মেহেদী হাসান সোহেল, প্রকৌশলী আদনান রুশদী, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম, প্রকৌশলী আসিফ হোসেন রচিসহ অনেকেই।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতি রক্ষায় ১৯৯৯ সালের ১৮ অক্টোবর জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়, যার চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ‘একটি উদ্যোগ, একটু চেষ্টা- এনে দেবে স্বচ্ছলতা, দেশে আসবে স্বনির্ভরতা’-এই স্লোগান নিয়ে এই অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।