ম্যান্ডেট নিয়ে আর ম্যান্ডেট ছাড়া কাজের মধ্যে পার্থক্য আছে : মির্জা ফখরুল

ম্যান্ডেট নিয়ে আর ম্যান্ডেট ছাড়া কাজের মধ্যে পার্থক্য আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীতে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার আয়োজনে ‘জুলাই স্মরণ’ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের ওপর আমি জোর দিতে চাই। আমি বিশ্বাস করি একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদের সমস্যাগুলোকে ধীরে ধীরে সমাধান করবে। বৈপ্লবিক কোনো ঘটনা ঘটবে, এটা সম্ভব নয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সেই পরিবর্তনটা অবশ্যই আসবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমাদের এই জায়গায় আরেকটি সমস্যা, যা সম্ভবত নিজেরাই তৈরি করেছি—সহনশীলতার অনেক অভাব আমাদের মধ্যে আছে। এই জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সহনশীল হতে হবে ও ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা পারব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০২২ সালে আন্দোলনের সময় অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করেছিলাম, ৩১ দফা কর্মসূচি নিয়ে আমরা জনগণের সামনে এসেছিলাম। যেদিনই কর্মসূচি নিয়ে সামনে আসি, সেই দিন আমাদের ওপর গুলি হয়েছে। অফিসের সামনের সভা করতে দেয়নি পুলিশ, গুলি করেছে এবং মিরপুরের একটি ছেলে শহীদ হয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমরাও চাই অতি দ্রুত এই হত্যার বিচার হোক। জরুরি সংস্কারগুলো অতি দ্রুত হোক। তবে একটি জিনিস মনে রাখা প্রয়োজন জনগণের প্রতিনিধিত্বসম্পন্ন সরকার খুবই জরুরি। কারণ ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করা আর ম্যান্ডেট ছাড়া কাজ করার মধ্যে অবশ্যই কিছু পার্থক্য আছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে এবং জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে—এমন আশা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আরও বড় একটি প্রশ্ন আছে—তা হলো প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণ করতে হবে, যা আওয়ামী লীগ সরকার ভেঙে দিয়েছে। এজন্য আমাদের এত সমস্যা। প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরায় নির্মাণ করতে হবে। কাজটা সহজ নয়, সময় লাগবে, ধৈর্য ধরতে হবে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বিগত ১৫-১৬ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিস্ট শাসকের অধীনে থেকে গোটা জাতি নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছে। আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, প্রতিবাদ করেছি। অসংখ্য নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, হত্যার শিকার হয়েছেন। বিচারের নামে অনেক রাজনৈতিক নেতা, আলেম-ওলামা হত্যা করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে অতিদ্রুত জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি করায় জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাকে ধন্যবাদ জানান মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, হত্যাকাণ্ডের শুরুটা অনেক আগেই। ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা, মানুষের অধিকারগুলো বিলীন করে দেওয়া এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তারা কাজ করেছে।
এসময় জুলাই-আগস্টে শহীদ, আহত ও অঙ্গহানির শিকারদের প্রতি দল ও নিজের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় সময় পার করেছি। এটি সত্য যে, সেই সময়টি আমাদের জন্য ছিল ভয়ংকর। আমাদের দলের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছিল। এখনও সব মামলা উঠানো হয়নি, কিছু বাকি রয়েছে। ১ হাজার ৭০০ নেতাকর্মী জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা অনেক কথা বলি, আসলে একটি বছর খুব বড় সময় নয়। এই সময়ে তারা অনেকগুলো কাজ করেছেন। অস্বীকার করার উপায় নেই। তারা যে বড় কাজটি এগিয়ে নিয়েছেন, তা হলো সংস্কারের কাজ।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে খালেদা জিয়া বলেছিলেন রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। এই কাঠামোয় মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, তা পূরণ করা যাবে না। সেজন্য ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছিলেন তিনি। সেখানে ছিল বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ৩১ দফার মধ্যেও সংস্কারগুলোর কথা বলেছি।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রে কিছু মতবিরোধ থাকবেই। রাজনৈতিক দলগুলো সব একমত হবে না। এই বিষয়টিকে বড় করে দেখিয়ে জাতির মধ্যে অযথা বিভক্তির সৃষ্টি করা হচ্ছে। পত্রিকার বরাতে ১২টি বিষয়ে একমত হওয়ার কথা উল্লেখ করে মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে দাবি করেন ফখরুল। বাকি বিষয়গুলোতে নিশ্চয়ই দায়িত্ব থাকবে—যারা সরকারে যাবেন, তারা বাকি কাজগুলো সমাধান করবেন।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তরুণরা ভবিষ্যতে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবেন, যেখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষ তার অধিকার নিয়ে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়তে পারবে। আমাদের শিশুদের আর এভাবে প্রাণ দিতে হবে না।