জিপিএ ২.৫৬ পেয়েও খুশি চা দোকানি সৈকত

সৈকত দাস রাজধানীর তেজগাঁওয়ের একটি চায়ের দোকান চালাচ্ছেন। চা-পান-বিড়ি বিক্রি করছেন এবং ক্রেতা সামলাচ্ছেন। এর ফাঁকেই মনোযোগ সহকারে মোবাইল ফোনে কি যেন দেখছেন। একটু পরেই হঠাৎ হাসি ছড়িয়ে পড়ল সৈকতের চোখে-মুখে। উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, ‘আমি পাস করেছি।’ তার চোখে-মুখে তখন তৃপ্তি ও আনন্দের ছাপ।
বাবার ফোন নম্বর বের করে সৈকত কল দিলেন। বললেন, ‘আব্বা দোকানে আসো। খুশির সংবাদ আছে। আমি পাস করেছি। ২.৫৬ পেয়েছি।’ অপর প্রান্ত থেকে বাবা বাদল দাস বললেন, ‘তুই বস, আমি দ্রুত আসছি।’ এরপর সৈকত একে একে তার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। তার ফলাফলের কথা জানান।
ফরিদপুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘কেলগ-মুখার্জী মেমোরিয়াল সেমিনারী’ থেকে পরীক্ষা দেন সৈকত দাস।
সৈকতের খুশি দেখে দোকানে বসে থাকা এক ক্রেতা জানতে চান, ‘তোমার দোকানে থাকা কোন জিনিস তুমি খেতে পছন্দ কর?’ সৈকত ইতস্তত করে উত্তর দিল, ‘কেক আর রুটি খাই।’ তখন ক্রেতা বললেন, ‘খুশি মনে তুমি একটা কেক খাও। আমি টাকা দেব।’ খাব না খাব না করেও সৈকত কেক নিলেন, খেলেন।
তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গীর্জার সামনে সৈকতের বাবার দোকান। ২০ বছর ধরে বাদল দাস এখানে দোকানদারি করেন।
এসব আলাপের সময় এ প্রতিবেদক ওই দোকানে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সৈকত বলেন, ‘আমি ফরিদপুরের একটি স্কুলে ছোটবেলায় পড়েছি। আমার বাবাও ওখানে পড়েছেন। আমার দাদার বাড়ি খুলনায়। পরীক্ষার সময় আমার অনেক জ্বর ছিল। সে জন্য আমার এই রেজাল্টেও আমি খুশি।’
সৈকতের কাছে জানতে চান এই প্রতিবেদক, আপনার বাবা খুশি হয়েছেন? উত্তরে সৈকত বলেন, ‘খুশি হয়েছে। আমার দুটি সাবজেক্টের পরীক্ষা খুব খারাপ হয়েছিল। জ্বরে মরে যাচ্ছিলাম সে সময়। আমার রেজাল্টে কেউ অখুশি না। তবে, আমার স্কুলের এব বন্ধু ফেল করেছে। তার জন্য একটু মন খারাপ।’
সৈকত বলেন, ‘এবার ঢাকার একটি কলেজে অ্যাডমিশন নেব। আর ফরিদপুরে পড়ব না। ঢাকায় পড়ব। আশা আছে, এবার আরও ভালোভাবে পড়ব। ভালো রেজাল্ট করতে হবে। বাবার চায়ের দোকানে বসি প্রতিদিন। আগামীতেও বসব। কলেজে যাব, চায়ের দোকানেও বসব।’