Skip to main content
NTV Online

শিশু-কিশোর

শিশু-কিশোর
  • অ ফ A
  • জবর খবর
  • আজব
  • রহস্য
  • ধাঁধা
  • জানো কি
  • তোমাদের জন্য
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
Follow
  • শিশু-কিশোর
ছবি

বর্ণিল সাজে সেমন্তী সৌমি

লাল টুকটুকে মিম

একান্তে তাহসান-রোজা

মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর ৫ খাবার

মেট গালা ফ্যাশনে দ্যুতি ছড়ালেন কিয়ারা

গ্রীষ্মের ফুলে ভিন্নরূপে রাজধানীর প্রকৃতি

বিমান বাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণে প্রধান উপদেষ্টা

বিমান বাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ প্রধান উপদেষ্টার

পুলিশ সপ্তাহ শুরু

স্টাইলিশ মিম

ভিডিও
স্বাস্থ্য প্রতিদিন : পর্ব ৫৫২৬
স্বাস্থ্য প্রতিদিন : পর্ব ৫৫২৬
মিউজিক নাইট : পর্ব ১৯৫
মিউজিক নাইট : পর্ব ১৯৫
এই সময় : পর্ব ৩৮২০
এই সময় : পর্ব ৩৮২০
মহিলাঙ্গন : পর্ব ৩৫৯
মহিলাঙ্গন : পর্ব ৩৫৯
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ০৮
এক্সপার্ট টুডেস কিচেন : পর্ব ২৯৯
এক্সপার্ট টুডেস কিচেন : পর্ব ২৯৯
জোনাকির আলো : পর্ব ১২৩
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৫
নাটক : প্রেম আমার
নাটক : প্রেম আমার
গানের বাজার, পর্ব ২৩৩
রোজা শাওয়াল রিজওয়ান
১৮:৪৫, ৩১ আগস্ট ২০১৬
রোজা শাওয়াল রিজওয়ান
১৮:৪৫, ৩১ আগস্ট ২০১৬
আপডেট: ১৮:৪৫, ৩১ আগস্ট ২০১৬
আরও খবর
শিশুদের স্বার্থে একসঙ্গে ডিএমপি ও সিসিমপুর
ছোট্ট টিয়া ও মিষ্টি লিলি
ঈদে তিন পর্বের বিশেষ সিসিমপুর
১৮ বছরে পা দিল শিশুদের প্রিয় সিসিমপুর
সুমন মাহমুদের তিনটি ছড়া

আমি মালালা বলছি

একটি শিশু, শিক্ষক, বই, কলম ...

রোজা শাওয়াল রিজওয়ান
১৮:৪৫, ৩১ আগস্ট ২০১৬
রোজা শাওয়াল রিজওয়ান
১৮:৪৫, ৩১ আগস্ট ২০১৬
আপডেট: ১৮:৪৫, ৩১ আগস্ট ২০১৬

বার্মিংহাম আগস্ট ২০১৩

মার্চ মাসে আমরা ওই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে অনেক গাছপালা আছে এমন এক এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় উঠলাম। কিন্তু মনে হলো আমরা যেন বনভোজন করছি।

আমাদের সমস্ত ব্যবহার্য জিনিস এখনো সোয়াতে, সবখানে মানুষের ভালোবাসার চিঠি। আর এখানে সব জিনিস কার্ডবোর্ডের বাক্সে, আরেকটা ঘরে আছে একটা পিয়ানো, যেটা আমরা কেউই বাজাতে পারি না। দেয়ালে আঁকা গ্রিক দেবতাদের ম্যুরাল। মাথার ওপর ছাদে খোদাই করা রয়েছে ডানাযুক্ত দেবশিশু। মূর্তি দেখে মা শুরু থেকেই অভিযোগ করছেন। 

বাড়িটা অনেক বড়। ফাঁকা বড় বৈদ্যুতিক লোহার গেটের ভেতর বাড়িটা অবস্থিত, এবং মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের কোনো বিলাসবহুল কারাগারে রাখা হয়েছে, পাকিস্তানে এমন বাসাকে আমরা সাবজেল বলে থাকি। পেছনে অনেক গাছওয়ালা একটি বাগান আর আমার ভাইদের সাথে ক্রিকেট খেলার সবুজ উঠান আছে। কিন্তু ওপরে ছাদে খেলা যায় না, রাস্তায় ঘুড়ি নিয়ে লড়াইতে কোনো শিশু দেখা যায় না এক প্লেট ভাত বা তিনটা টমেটো ধার চাইতে কোনো প্রতিবেশী আমাদের কাছে আসে না। পাশের বাড়িটার সাথে আমাদের পার্থক্য কেবল একটা দেয়াল, কিন্তু মনে হয়ে আমরা যেন কত মাইল দূর।

বাইরে তাকালে দেখি, মা মাথা চাঁদর দিয়ে ঢেকে বাইরে বাগানে বাগানে ঘুরে ঘুরে পাখিদের খাওয়াচ্ছেন। মনে হয় গান গাইছেন, সম্ভবত তাঁর পছন্দের সেই টাপা : ‘বাগানের ঘুঘুদের মেরে ফেলো না। একটাকে মারলে বাকিরা আসবে না।’ তিনি আমাদের আগের রাতের খাবারের উচ্ছিষ্টগুলো তাদের দিচ্ছেন, তাঁর চোখে পানি। বাড়িতে যা খেতাম এখানেও প্রায় একই জিসিনই খাই দুপুরে, আর রাতে ভাত-মাংস, আর সকালে ডিম ভাজি, চাপাতি আর আমার ছোট্ট ভাই অতলের চালু করা নিয়ম অনুযায়ী মাঝে মাঝে মধুও থাকে, যদিও বার্মিংহামে তাঁর প্রিয় আবিষ্কারটা হলো নাটেলা স্যান্ডউইচ, কিন্তু সব সময়ই তাঁর খাবার এটো থেকে যায় । খাবারের এই অপচয় নিয়ে মায়ের মন খারাপ থাকে। আমি জানি, খালি পেটে যাতে বাচ্চাদের স্কুলে যেতে না হয় সেজন্য তিনি বাড়িতে কত বচ্চাকে খাইয়েছেন। তাদের কথাই মায়ের মনে পড়ে আর মনে হয় তাদের এখন কীভাবে চলছে। 

মিঙ্গোরায় আমি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলে কখনোই বাসা খালি পেতাম না আর এখন আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে একটা শান্ত দিন বা স্কুলের কাজ করার জন্য একটু নিভৃত সময়ের জন্য আমি কাকুতি মিনতি করছি। এখানে শুধু খুশালের এক্সবক্স আর বাইরের পাখিদের শব্দ শুনতে পাই। আমি আমার ঘরে একলা বসে জিগস’ পাজল করতে করতে অতিথির জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। 

আমরা খুব ধনী ছিলাম না, আমার বাবা-মা জানেন ক্ষুধা পেটে নিয়ে থাকতে কেমন লাগে। আমার মা কোনোদিন কাউকে ফিরিয়ে দিতেন না। এক গরমের দিনে এক দরিদ্র মহিলা ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত অবস্থায় আমাদের বাসায় এসেছিল, মা তাকে ডেকে এনে খাবার দিয়েছিলেন, মহিলাটা খুব খুশি হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এই মহল্লার প্রতিটা বাড়িতে গিয়েছি, শুধু এ বাড়ির দরজাই খোলা পেলাম,’ তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা যেখানেই থাকুন আল্লাহ যেন সব সময় আপনাদের বাড়ির দরজা খোলা রাখেন।’
আমি জানি আমার মা খুব নিঃসঙ্গ। তিনি খুবই মিশুক, প্রতিবেশী সব মহিলা বিকেল বেলা আমাদের পেছনের বারান্দায় এসে একত্র হতো, আশপাশের বাড়িতে কাজ করা মহিলারা একটু জিরিয়ে নিত আমাদের বাসায়। এখন তিনি সারাক্ষণ বাড়ির মানুষের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ইংরেজি না বোঝার কারণে এ দেশে থাকাটা তাঁর পক্ষে কঠিনই বটে। আমাদের বাসায় সমস্ত সুবিধাই ছিল, কিন্তু এখানে আসার পর সবই তাঁর কাছে রহস্যময়, যেমন- ওভেন, ওয়াশিং মেশিন আর টিভি চালানোটা আমাদেরকে কেউ একজন দেখিয়ে দিয়েছিল। 

বরাবরের মতোই বাবা রান্নাঘরে কোনো কাজ করেন না, আমি তাকে খেপাই, ‘বাবা, তুমি নারী অধিকারের কথা বলো, কিন্তু মা-ই তো সবকিছু ঠিকঠাক করে। তুমি চায়ের কাপটা পর্যন্ত ধোও না।’ 

এখানে বাস এবং রেলগাড়ি থাকলেও সেগুলোয় চড়ব কি চড়ব না, সে ব্যাপারে প্রায়ই আমরা অনিশ্চয়তায় ভুগি। মা চীনাবাজারের শপিংয়ের কথা মনে করে মন খারাপ করেন। আমার জ্ঞাতিভাই শাহ এখানে থাকাতে মায়ের কিছুটা সুবিধা হয়। শাহের গাড়ি আছে এবং তিনিই মাকে শপিং করতে নিয়ে যান, কিন্তু বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের সাথে কেনা জিসিনপত্র নিয়ে আগের মতো গল্প পারেন না, তাই ব্যাপারটা নিয়ে একটু মন খারাপ থাকে মায়ের।

বাসায় কোনো একটা দরজায় শব্দ হলেই মা লাফিয়ে ওঠেন, এখন তিনি সামান্য কোনো শব্দ হলেই ভয়ে লাফিয়ে ওঠেন। তিনি প্রায়ই কেঁদে ওঠেন, এরপর আমাকে জড়িয়ে ধরেন। ‘মালালা বেঁচে আছে,’ তিনি বলেন, ‘এখন তিনি আমাকে তাঁর সবচেয়ে বড় নয়, সবচেয়ে ছোট সন্তানের মতো করে আদর করেন।’ 

আমি জানি, আমার বাবাও কাঁদেন। আমি এক পাশে চুল সরালে যখন আমার কপালের দাগটা দেখা যায় তখন কাঁদেন, বিকেলে বাগানে নিজের বাচ্চাদের কণ্ঠস্বর শুনে ঘুম ভাঙার পর স্বস্তির সাথে আবিষ্কার করেন এর মাঝে আমার কণ্ঠস্বরও আছে তখন কাঁদেন। তিনি জানেন, মানুষ বলে, আমি গুলিবিদ্ধ হয়েছি, তাঁর দোষেই। তিনি চ্যাম্পিয়ন তৈরি করার উদ্দেশ্যে লোভী পিতার মতো আমাকে প্রতিবাদ করতে ঠেলে দিয়েছেন, যেন আমার নিজের কোনো চিন্তাশক্তি নেই। তার জন্য এটা খুব কঠিন। প্রায় বিশ বছর ধরে গড়ে তোলা সবকিছু তিনি পেছনে ফেলে আসতে বাধ্য হয়েছেন। শূন্য থেকে নির্মাণ করা সেই স্কুল যেটার এখন তিনটা ভবন, ১১০০ শিক্ষার্থী এবং ৭০ জন  শিক্ষক-শিক্ষিকা আছে। আমি জানি সাদা পাহাড় এবং কালো পাহাড়ের মাঝের ছোট্ট একটি গ্রামের গরিব একটি ছেলে হিসেবে তিনি যা করেছেন, তাতেই তিনি গর্বিত। তিনি বলেন, ‘এটা এমন ব্যাপার যেন তুমি একটা গাছ লাগিয়ে তার যত্ন নিয়েছ, তার ছায়ার বসার অধিকার তোমার আছে।’ 

সোয়াতে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করার জন্য অনেক বড় একটা স্কুল প্রতিষ্ঠান করা, শান্তিতে থাকা এবং আমাদের দেশটাকে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখে যাওয়া ছিল বাবার জীবনের স্বপ্ন। অন্যদের সাহায্যের কারণে তিনি সোয়াতে সম্মান এবং সামাজিক মর্যাদা লাভ করেছেন। তিনি দেশের বাইরে থাকার কথা কোনোদিন কল্পনাও করেননি। অথচ মানুষ যখন বলে আমরা বিদেশে থাকতে চেয়েছি তখন বাবার মন খুব খারাপ হয়ে যায়। একজন মানুষের পক্ষে আঠার বছর ধরে গড়ে তোলা শিক্ষাদীক্ষা, সুন্দর জীবন ফেলে অন্য জায়গায় যাওয়া সম্ভব নয়। পানি থেকে মাছকে যেভাবে ছুড়ে ফেলা হয় সেভাবেই যেন ছুড়ে ফেলা হয়েছে তাকে। তিনি বলতেন, ‘আমরা আইডিপি থেকে ইডিপিতে (এক্সটার্নাল ডিসপ্লেসড পারসন) রূপান্তরিত হয়েছি। 

প্রায়ই খাবার সময় আমরা বাড়ির কথা মনে করা চেষ্টা করি। সবকিছুর জন্যই খারাপ লাগে, সেই দুর্গন্ধযুক্ত নদীটা নিয়ে বাবা বলেন, ‘যদি জানতাম এমনটা ঘটবে, তবে শেষবারের মতো পেছনে তাকাতাম। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় নবীজি যা করেছিলেন। তিনি বারবার পেছনে তাকিয়েছিলেন। এখন এত দূর থেকে সোয়াতের কোনো কোনো ঘটনা বইয়ে পড়া গল্পের মতো মনে হয়। 

বাবা তাঁর অনেকটা সময় শিক্ষাবিষয়ক মতবিনিময় সভায় ব্যয় করেন। আমি জানি জিসিনটা তাঁর জন্য অদ্ভুত, কারণ এখন আমার বাবা হিসেবে তাঁর কথা মানুষ শুনতে চায়, তার মেয়ে হিসেবে আমার কথা নয়। এতদিন আমি তাঁর মেয়ে হিসেবে পরিচিত ছিলাম। এখন তিনি আমার বাবা হিসেবে পরিচিত। একবার ফ্রান্সে আমার পক্ষ থেকে একটি অ্যাওয়ার্ড নিতে গিয়ে তিনি অভ্যাগতদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আমি পৃথিবীর যে স্থানে থেকেছি সেখানে ছেলেদের কারণে বাবাদের মুখ উজ্জ্বল হয়। যে গুটিকতক ভাগ্যবান বাবার মুখ মেয়েদের কারণে উজ্জ্বল হয়, তাঁদের মাঝে একজন হলাম আমি।’

এখন আমার শোয়ার ঘরের দরজায় গাঢ় নীল রঙের ইউনিফর্মের বদলে একটা সবুজ রঙের ইউনিফর্ম ঝুলানো। আমি এখন এমন এক স্কুলে পড়ি, যেখানে হঠাৎ হামলা হতে পারে এমন কোনো ভয়ই কাজ করে না। বার্মিংহামের এই স্কুলটা ভালো, অনেক বিষয় আমাদের মতোই, কিন্তু এখানকার শিক্ষকরা ব্ল্যাক বোর্ডের বদলে পাওয়ার পয়েন্ট এবং কম্পিউটার ব্যবহার করেন। আমাদের কিছু অন্যরকম বিষয় আছে সংগীত শিল্প, কম্পিউটার শিক্ষা, রান্না শেখার গাইড, অর্থনীতি আর আমরা বিজ্ঞানে ব্যবহারের ক্লাস করি, যেটা পাকিস্তানে বিরল, যদিও কিছুদিন আগের পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষায় আমি মাত্র চল্লিশ শতাংশ নম্বর তুলতে পেরেছি এখানে। আমার প্রিয় বিষয়। নিউটনকে নিয়ে পড়তে আমি ভালোবাসি, পুরো মহাবিশ্ব যেসব মূলতত্ত্ব মেনে চলে আমি সেগুলো পড়তে ভালোবাসি।

কিন্তু আমার মায়ের মতোই আমি নিঃসঙ্গ। বাড়ির বন্ধুদের মতো ভালো বন্ধু তৈরি করতে সময় লাগবে। আর এখানকার স্কুলের মেয়েরা আমাকে আলাদা চোখে দেখে। মানুষ বলে, ওহ, ওটা মালালা। তারা আমাকে নারী অধিকারকর্মী হিসেবে দেখে। অথচ খুশাল স্কুলে আমি ছিলাম শুধুই মালালা, তাদের কৌতুক বলতে এবং কোনো কিছু ব্যাখ্যা করার জন্য ছবি এঁকে বোঝাতে ভালোবাসতাম। আর হ্যাঁ, যে সারাক্ষণ ছোট ভাই ও প্রিয় বন্ধুর সাথে ঝগড়া করে। আমার মনে হয় সব ক্লাসের খুব নম্র একটা মেয়ে থাকে, অসাধারণ বুদ্ধিমতী বা মেধাবী কোনো মেয়ে থাকে, শিক্ষকদের প্রিয় একটা মেয়ে থাকে, একট সুন্দরী মেয়ে থাকে, লাজুক একটা মেয়ে থাকে, একটা দুষ্টু মেয়ে থাকে, কিন্তু এখানে কোন মেয়েটি কেমন তা এখনো বের করতে পারিনি।

আর এখানে, আমি আমার কৌতুক বলার মতো কাউকে পাই না, সেগুলো আমি জমিয়ে রাখি স্কাইপে মনিবাকে বলার জন্য, সব সময় আমার প্রথম প্রশ্নটা থাকে স্কুলের সর্বশেষ খবরটা কী? কে কার সাথে কথাকাটাকাটি করেছে বা কে শিক্ষকের বকা খেয়েছে এসব শুনতে আমার খুব মজা লাগে। সর্বশেষ পরীক্ষায় মনিবা প্রথম হয়েছে। আমার সহপাঠীরা এখনো আমার নাম লিখে একটা আসন আমার জন্য রাখে এবং ছেলেদের স্কুলের আমজাদ স্যার প্রবেশপথে আমার বড় একটা পোস্টার লাগিয়েছেন। প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার পথে সেটাকে তিনি সম্ভাষণ জানান। 

আমি মনিবাকে ইংল্যান্ডের জীবনের কথা বলি। তাকে বলি একই রকম বাড়ি, রাস্তা ঘাটের কথা, যেখানে সোয়াতে দুর্গম বাড়ির পাশে মাটি আর পাথরের তৈরি কুটিরও থাকতে পারে। মনিবাকে বলি সেই মজবুত বাড়িগুলো কত সুন্দর, তারা বন্যা আর ভূমিকম্পেও টিকে থাকতে পারে কিন্তু ছাদে খেলার জায়গা নেই। ওকে বলি আমি ইংল্যান্ড পছন্দ করি কারণ মানুষ এখানে নিয়ম মানে, তারা পুলিশকে সম্মান করে এবং সবকিছু সময়মতো হয়। এখানে সব দায়িত্ব সরকারের, সেনাপ্রধানের নাম কারো জানার প্রয়োজন হয় না। এখানে মহিলারা চাকরি করে, যা সোয়াতে কল্পনাও করা যায় না। নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ ঠিকঠাক কাজ করে যাচ্ছে। এখানে মেয়েরা নিজেদের ইচ্ছেমতো পোশাক পরতে পারে।

গুলি করার ঘটনা নিয়ে আমি বেশি ভাবি না। যদিও প্রতিদিন সকালে আয়নায় তাকালে ঘটনাটি মনে পড়ে যায়। আমার চেহারায় স্নায়ুর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যথাসম্ভব উন্নতি হয়েছে। আমি আর কখনোই সম্পূর্ণ আগের মতো হব না। আমি পুরোপুরি পলক ফেলতে পারি না। এবং কথা বলার সময় আমার বাম চোখটা অনেক বেশি বন্ধ হয়। বাবার বন্ধু হিদায়াতুল্লাহ তাঁকে বলেছেন যে আমার চোখটার জন্য আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত। এটা নাকি আমার ত্যাগের সৌন্দর্যকেই প্রকাশ করে, তিনি বলেন। 
এখনো সঠিকভাবে আমার ওপর হামলাকারীর নামটা জানা যায়নি, কিন্তু আতাউল্লাহ খান নামের এক লোক দাবি করেছে যে এটা তার কাজ। পুলিশ তাকে ধরতে না পারলেও বলছে যে তারা তদন্ত করছে এবং আমাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। 

সেদিন আসলে কী ঘটেছিল সেটা আমার খুব স্পষ্টভাবে মনে না পড়লেও মাঝে মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ কিছু দৃশ্য ঝিলিক দিয়ে যায়। এই ফ্ল্যাশব্যাকগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে আসে। সৌদি আরবে উমরাহর পথে, আবুধাবিতে জুন মাসে সবচাইতে বাজেভাবে ব্যাপারটা ঘটেছিল। মা মক্কায় প্রার্থনা করার জন্য বিশেষ বোরখা কিনতে চাওয়ায় আমি তাঁর সাথে শপিংমলে গিয়েছিলাম। আমি বোরখা চাইনি। আমি কেবল চাদর পরব বলেই ঠিক করেছিলাম, কারণ কোথাও নির্দিষ্ট করে বলা নেই যে একজন নারীর বোরখা পরতেই হবে। মার্কেটের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ আমি আমার চারপাশে বহু মানুষ দেখতে পেলাম। মনে হলো তারা সবাই বন্দুক হাতে নিয়ে আমাকে গুলি করার জন্য অপেক্ষা করছে। মুখে কিছু না বললেও আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম। আমি নিজেকে বললাম, মালালা তুমি এরই মাঝে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছ, এটা তোমার দ্বিতীয় জীবন। ভয় পেও না, ভয় পেলে তুমি আর সামনে এগোতে পারবে না।

আমরা বিশ্বাস করি, মক্কায়, কালো কাপড়ে জড়ানো সেই পবিত্র কাবা শরিফে প্রথমবার দৃষ্টি রাখার সঙ্গে সঙ্গে মনে যে ইচ্ছার উদয় হবে, আল্লাহ তা পূরণ করেন। আমরা কাবায় নামাজ পড়ার সময় পাকিস্তানের শান্তির জন্য প্রার্থনা করলাম, মেয়েদের শিক্ষার জন্য প্রার্থনা করলাম, অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, আমার চোখ অশ্রুসিক্ত। কিন্তু মক্কায় নবীজির স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখি সেসব জায়গায় খালি বোতল আর বিস্কুটের প্যাকেট। দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম, মানুষ যেন ইতিহাস সংরক্ষণে অবহেলা করেছে। মনে হলো তারা ভুলে গেছে হাদিসে বলা আছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অর্ধেক।

আমার পৃথিবী অনেক বদলে গেছে। আমাদের ভাড়া বাসার বসার ঘরের শেলফে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ফ্রান্স, স্পেন, ইটালি ও অস্ট্রিয়াসহ নানা স্থান থেকে পাওয়া পুরস্কারগুলো সাজানো। আমি সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছি। স্কুলের কাজের জন্য পুরস্কার পেলে আমি খুশিই হতাম কারণ ওগুলো পাওয়ার জন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করতাম কিন্তু, এই পুরস্কারগুলো অন্যরকম। আমি কৃতজ্ঞ, কিন্তু এগুলোতে চোখ পড়তেই মনে পড়ে যায়, প্রতিটা ছেলেমেয়ের মনে শিক্ষার আলো জ্বালাতে এখনো কত কাজ করা বাকি। আমি নিজেকে তালেবানদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ মেয়ে নয়, শিক্ষার জন্য লড়াই করা মেয়ে হিসেবে পরিচিত করে তুলতে চাই। এই কাজেই উৎসর্গ করতে চাই আমার জীবন। 

আমার ষোলতম জন্মদিনে জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার জন্য আমি নিউইয়র্ক যাই, বিশ্বের বড় বড় নেতারা যেখানে দাঁড়িয়ে মানুষের উদ্দেশে কথা বলেছেন, সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারাটা কিছুটা শঙ্কার ব্যাপার হলেও, আমার কী বলত হবে তা আমি জানতাম। নিজেকে বললাম, মালালা, এটাই তোমার সুযোগ। মাত্র ৪০০ মানুষ আমার সামনে থাকলেও আমার কল্পনায় ভেসে উঠল লাখ লাখ লোক। আমি শুধু জাতিসংঘের প্রতিনিধিরূপ বক্তৃতাটা লিখে আনিনি, পৃথিবীতে দিনবদলে হাওয়া এনে দিতে সক্ষম প্রতিটা মানুষের জন্য বক্তৃতা লিখেছিলাম। প্রত্যেক দরিদ্র মানুষ, শিশুশ্রমে বাধ্য হওয়া শিশু, সন্ত্রাসবাদের এবং অশিক্ষার শিকার প্রতিটা মানুষের কাছে আমি পৌঁছাতে চেয়েছি। মনে গভীর আশা ছিল, প্রতিটি শিশুর কাছে আমি পৌঁছাতে পারব এবং প্রত্যেকে আমার কথা থেকে সাহস নিয়ে নিজ নিজ অধিকার আদায়ে উঠে দাঁড়াবে। 

আমার গোলাপি সালোয়ার কামিজের ওপর আমি বেনজির ভুট্টোর সাদা চাদর পরলাম। বিশ্বের প্রতিটা শিশুকে বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করতে বিশ্বনেতাদের কাছে আহ্বান জানালাম, ‘চলুন আমরা আমাদের বই ও কলম হাতে তুলে নিই।’ আমি বললাম, ‘এগুলোই আমাদের সবচাইতে শক্তিশালী অস্ত্র। একটি শিশু, একজন শিক্ষক, একটি বই এবং একটি কলমই পৃথিবী বদলে দিতে পারে।’ মানুষ আমাকে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন না জানানো পর্যন্ত বুঝিনি কীভাবে আমার কথাগুলো তাঁরা গ্রহণ করেছেন। মা কাঁদছিলেন আর বাবা বলেছিলেন, আমি সবার মেয়ে হয়ে গেছি। 

সেদিন অন্য একটা ঘটনাও ঘটল। আমার মা প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে ছবি তুলতে রাজি হলেন। তিনি সারা জীবন পর্দা অনুসরণ করায় ক্যামেরার সামনে কখনোই চেহারা অনাবৃত করেননি, তাই এটা তাঁর জন্য কঠিন এবং বিরাট এক ত্যাগ ছিল। 

পরদিন সকালের নাশতার সময় অতল আমাকে বলল, ‘মালালা আমি বুঝি না তুমি বিখ্যাত কেন? তুমি কী করেছ?’ আমরা যতদিন নিউইয়র্কে ছিলাম স্ট্যাচু অব লিবার্টি, সেন্ট্রাল পার্ক আর তার প্রিয় খেলা বেব্লেড নিয়েই মেতেছিল। ওই ভাষণের পর সারা বিশ্ব থেকেই আমি সমর্থনসূচক বার্তা পেলেও আমার নিজ দেশ ছিল নীবর, কেবল ফেসবুক আর টুইটারে দেখতে পাচ্ছিলাম, আমার নিজের পাকিস্তানের ভাইবোনেরাই আমার বিরুদ্ধে চলে গেছে। তারা আমাকে কিশোরী বয়সের খ্যাতি লাভের জন্য কথা বলার অপরাধে অভিযুক্ত করল। একজন বলল, তোমার দেশের ভাবমূর্তি ভুলে যাও, স্কুলের কথা ভুলে যাও। আমি নাকি শেষ পর্যন্ত বিদেশের বিলাসবহুল জীবন পেয়ে যাব, এর পেছনেই নাকি আমি ছুটছিলাম। 

আমি এতে কিছু মনে করি না, আমি জানি মানুষ এসব বলে কারণ তারা জানে আমাদের নেতা ও রাজনীতিবিদরা বারবার আশ্বাস দিয়েও কথা রাখে না। তার ওপর অন্তহীন সন্ত্রাসী হামলা জাতিকে অস্থির করে রেখেছে। মানুষ একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কিন্তু আমি সবাইকে জানাতে চাই যে আমি নিজের জন্য সমর্থন চাই না, আমি আমার শান্তি এবং শিক্ষার কাজের জন্য সমর্থন চাই। 

ভাষণের পর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক চিঠিটা এসেছিল সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া এক তালেবান কমান্ডের কাছ থেকে, তার নাম আদনান রশিদ। সে পাকিস্তানের বিমানবাহিনীতে ছিল। প্রেসিডেন্ট মুশাররফকে হত্যার চেষ্টা করার অভিযোগে ২০০৩ সাল থেকে সে কারাগারে ছিল। সে বলল যে, তালেবানরা আমার শিক্ষা অভিযোগের জন্য আমাকে টার্গেট করেনি, আমি তাদের ইসলামী শাসন কায়েমের চেষ্টার নিন্দা করেছি বলেই টার্গেট করেছে। সে বলল যে, আমাকে চিঠি লেখার কারণ হচ্ছে আমি গুলিবিদ্ধ হওয়ায় সে স্তম্ভিত এবং তার ইচ্ছা ছিল সম্ভব হলে আমাকে আগেই সতর্ক করে দেয়া। সে লিখেছে, আমি যদি পাকিস্তানে ফিরে বোরখা পরে মাদ্রাসায় যাওয়া শুরু করি, তাহলে সে আমাকে ক্ষমা করে দেবে। 

সাংবাদিকরা এর জবাব দেওয়ার জন্য আমাকে পীড়াপীড়ি করলেও আমি ভাবলাম, এই কথা বলার সে কে? তালেবান আমাদের শাসক নয়। এটা আমার জীবন, আমি কীভাবে থাকব সেটা আমার ব্যাপার। কিন্তু মোহাম্মদ হানিফের লেখা একটি নিবন্ধে একটা ব্যাপার ফুটে উঠল, কিছু কিছু লোক দাবি করছে যে আমি আদৌ গুলিবিদ্ধই হইনি, কিন্তু এই চিঠির মাধ্যমেই বোঝা গেল তালেবানরা দায় স্বীকার করছে। 

আমি জানি আমি পাকিস্তানে ফিরব, কিন্তু বাবাকে বাড়ি ফেরার কথা বললেই তিনি অজুহাত খোঁজেন। না, তোমার চিকিৎসা এখানে শেষ  হয়নি, তিনি বলেন। এখানকার স্কুলগুলো ভালো। তোমার উচিত এখানে থেকে জ্ঞানার্জন করা, যাতে তোমার কথাগুলো তুমি দৃঢ়তার সাথে তুলে ধরতে পারো। তিনি ঠিকই বলেছেন, আমি জ্ঞানের অস্ত্র দ্বারা প্রশিক্ষিত হতে চাই, শিখতে চাই। তাহলেই আমি আমার উদ্দেশ্যের জন্য ভালোভাবে লড়তে পারব। 

আজ আমরা সবাই জানি শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। শুধু পশ্চিমেই না, ইসলামও এই অধিকার দিয়েছে। ইসলাম বলে, প্রতিটা ছেলেমেয়েকে স্কুল যেতে হবে।

কুরআনে লেখা আছে, আল্লাহ চান আমরা জ্ঞানার্জন করি। তিনি চান, আমরা আকাশের নীলের রহস্য, মহাসাগর এবং নক্ষত্র সম্পর্কে জানি। আমি জানি এটা বিরাট লড়াই। পৃথিবীতে পাঁচ কোটি ৭০ লাখ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় না, যার তিন কোটি বিশ লাখ হলো মেয়ে। দুঃখজনকভাবে আমার নিজের দেশ পাকিস্তানেরই সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী শিক্ষার অধিকার থাকলেও ৫১ লাখ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চৌকাঠও মাড়াতে পারে না। আমাদের প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় পাঁচ কোটিই নিরক্ষর, যার দুই-তৃতীয়াংশই নারী আমার নিজের মায়ের মতো।

মেয়েদেরকে হত্যা করা এবং স্কুল উড়িয়ে দেওয়া তো চলছেই।  আমাদের দেখে আসা করাচির একটি মেয়েদের স্কুলে মার্চ মাসে হামলা হয়েছে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে খেলার মাঠে একটি বোমা এবং একটি গ্রেনেড ছুড়ে দেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক আবদুর রশিদ নিহত হন এবং আট থেকে ১০ বছরের মধ্যে আট শিশু আহত হয়। আট বছর বসয়ী এক শিশু পঙ্গু হয়ে গেছে। মা খবরটা শুনে কেবল কাঁদতেই থাকলেন। আমাদের বাচ্চারা যখন ঘুমায় আমরা তখন তাদের মাথায় একটা চুলকেও বিরক্ত করি না। তিনি বললেন, ‘কিন্তু এমন লোকও আছে যারা তাদেরকে বন্দুক দিয়ে গুলি করে অথবা বোমা ছোড়ে। বাচ্চাদের শিকারে পরিণত করতেও তাদের বুক কাঁপে না।’ সবচাইতে আতঙ্কজনক হামলা হয় জুন মাসে কোয়েটা শহরে, মেয়েদের কলেজের পথে যেতে থাকা ৪০ ছাত্রীসমেত একটি বাসকে উড়িয়ে দেয় এক আত্মঘাতী বোমারু। ১৪ জন নিহত হয়। আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হলে কোনো কোনো সেবিকাকেও গুলি করা হয়।

কেবল তালেবানরাই বাচ্চাদের মারছ না। ড্রোন হামলাতেও বাচ্চারা মারা যায়, যুদ্ধ বা মাঝেমধ্যে ক্ষুধা আর মাঝেমধ্যে তাদের নিজ পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জুন মাসে সোয়াতের একটু উত্তরেই গিলগিতে দুটো মেয়ে ঐতিহ্যবাহী জামা এবং হিজাব পরে বৃষ্টির মাঝে নিজেদের নৃতরত একটি ভিডিও অনলাইনে পোস্ট করায় তাদের হত্যা করা হয়। সম্ভবত তাদের আপন সৎভাই তাদের গুলি করে। 

আজ সোয়াত অন্য অনেক জায়গার চেয়ে শান্ত, কিন্তু তালেবানদের সরিয়ে দেওয়ার দাবি করার চার বছর পরও আজও সেখানে সেনাবাহিনী আছে। ফজলুল্লাহ এখানো পলাতক এবং এখানে আমাদের বাসচালক গৃহবন্দি। আমাদের উপত্যকা একদিন যেটা ছিল পর্যটকদের জন্য স্বর্গতুল্য, আজ এক ত্রাসের রাজত্ব। এখানে আসতে ইচ্ছুক বিদেশিদের ইসলামাবাদের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নো অবজেকশন সনদপত্র পেতে হয়। হোটেল এবং কারুশিল্পের দোকানগুলো শূন্য। পর্যটকদের ফেরাতে আরো বহুদিন লাগবে। 

গত এক বছর ধরে আমি পৃথিবীর অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা দেখেছি। কিন্তু আমার কাছে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা আমার উপত্যকা। আমি জানি না, তাকে আবার কবে দেখব, কিন্তু জানি দেখা হবে। রমজান মাসে আমার বাগানে লাগানো আমের গাছটির কী হয়েছে, তা আমি আজও ভাবি, ভাবি, কেউ সেটাতে পানি দিচ্ছে, যাতে আগামী প্রজন্মের মেয়েরা এর ফল খেতে পারে। 

আজ আমি নিজেকে আয়নায় দেখে এক সেকেন্ড ভাবলাম। একদিন আমি আল্লাহর কাছে দুই ইঞ্চি বেশি উচ্চতা চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি আমাকে আকাশের সমান উচ্চতা দিয়েছেন, এত লম্বা যে আমি আর নিজেকে পরিমাপ করতে পারি না। তাই আমার ওয়াদা অনুযায়ী ১০০ রাকাত নফল নামাজ আমি আদায় করেছি। 

আমি আমার সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবাসি। আমি আমার আল্লাহকে ধন্যবাদ দিই। আমি সারা দিন তাঁর সাথে কথা বলি। তিনিই মহান। মানুষের কাছে পৌঁছানোর এই উচ্চতা দেওয়ার মাধ্যমে তিনি আমাকে অনেক বড় দায়িত্বও দিয়েছেন। প্রতিটা বাড়িতে, এলাকায়, গ্রামে, দেশে শান্তি বিরাজ করুক- এই আমার স্বপ্ন। বিশ্বের প্রতিটা ছেলে, প্রতিটা মেয়ের জন্য শিক্ষা অধিকার। বন্ধুদের সঙ্গে একসাথে বসে বই পড়া আমার অধিকার। প্রতিটা মানুষের মুখে আনন্দের হাসি দেখা আমার অভিলাষ। 

আমি মালালা। আমার পৃথিবী বদলে গেছে, কিন্তু আমি বদলাইনি। 

(শেষ)

পাঠকের পছন্দ

গরমে ঘামাচিতে জেরবার?

ভ্রমণের সময় যা মনে রাখবেন

কীভাবে হবেন ভালো সহকর্মী?

সর্বাধিক পঠিত
  1. আসছে এ পি জে আবদুল কালামের বায়োপিক, নায়ক ধানুশ
  2. অক্ষয়ের মামলা, সুদসহ টাকা ফেরত দিয়ে ‘হেরা ফেরি ৩’ ছড়ালেন পরেশ রাওয়াল
  3. শুধু অভিনেতা নন, পেশাদার পাইলটও ছিলেন মুকুল দেব
  4. বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই ঘরবন্দি ছিলেন মুকুল দেব
  5. পরেশ রাওয়ালের বিরুদ্ধে ২৫ কোটির মামলা ঠুকলেন অক্ষয় কুমার
  6. টিজারেই ঝড় তুলল ‘ওয়ার ২’, মুক্তির তারিখ ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত

আসছে এ পি জে আবদুল কালামের বায়োপিক, নায়ক ধানুশ

অক্ষয়ের মামলা, সুদসহ টাকা ফেরত দিয়ে ‘হেরা ফেরি ৩’ ছড়ালেন পরেশ রাওয়াল

শুধু অভিনেতা নন, পেশাদার পাইলটও ছিলেন মুকুল দেব

বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই ঘরবন্দি ছিলেন মুকুল দেব

পরেশ রাওয়ালের বিরুদ্ধে ২৫ কোটির মামলা ঠুকলেন অক্ষয় কুমার

ভিডিও
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
আপনার জিজ্ঞাসা : পর্ব ৮৬৮
আপনার জিজ্ঞাসা : পর্ব ৮৬৮
ছুটির দিনের গান : পর্ব ৪১৫ (সরাসরি)
ছুটির দিনের গান : পর্ব ৪১৫ (সরাসরি)
টেলিফিল্ম : প্রিয় অভিভাবক
টেলিফিল্ম : প্রিয় অভিভাবক
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ০৮
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫০
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫০
জোনাকির আলো : পর্ব ১২৩
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৬
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৬
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, পর্ব : ১২

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Browse by Category

  • About NTV
  • Career
  • NTV Programmes
  • Advertisement
  • Web Mail
  • NTV FTP
  • Satellite Downlink
  • Europe Subscription
  • USA Subscription
  • Privacy Policy
  • Terms & Conditions
  • Contact
  • Archive

NTV Prime Android App

Find out more about our NTV: Latest Bangla News, Infotainment, Online & Live TV

Qries

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited. All rights reserved

x