মাহে রমজানে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর আমল : আল্লাহর রাস্তায় দান

মাহে রমজান মুমিন বান্দার জন্য জান্নাতের পথে অত্যন্ত দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সময়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন : ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক! যার ওপর রমজান মাস প্রবেশ করল অথচ তার গুনাহ মাফ করা হলো না। (সহিহ মুসলিম : ২৫৫১, বায়হাকি শুআবুল ইমান : ৭৫০০, গারাইবুত তাফসির , খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৬২৫, তাফসিরুল ওয়াসিত : খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১০৪, আল-মু’জামুল কাবির : খণ্ড ১৯, পৃষ্ঠা ১৪৪)। মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে মুমিন মুসলমানের নিজের গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নেওয়ার এবং জান্নাতের পথে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সব থেকে বড় বাহন হলো আল্লাহর রাস্তায় দান করা। রাসুলুল্লাহ (স.) রমজান মাসে খুব বেশি পরিমাণে দান করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানকারী ছিলেন, রমজান মাসে তিনি সবচেয়ে বেশি দান করতেন। বিশেষ করে জিবরাঈল (আ.) যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তাঁর দানের প্রবাহ দ্রুতগতিতে প্রবাহমান বাতাস অপেক্ষা দ্রুত হয়ে উঠত। (সহিহ আল-বোখারি : ১৯০৬, সহিহ মুসলিম : ২৩০৮, মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ২৬৬২৪, মুসনাদে আহমাদ : ৩৪২৫, আল-আদাবুল মুফরাদ : ১৫১)
দানের মাধ্যমে যে মহান আল্লাহর সর্বাধিক নৈকট্য অর্জন করা সম্ভব সেটা পবিত্র কোরআনের অনেকগুলো আয়াত এবং অসংখ্য সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের দৃষ্টান্ত একটি শষ্যবীজের মতো, যা থেকে সাতটি শিষ বের হয়, প্রত্যেকটি শিষে থাকে ১০০টি শষ্যদানা। আর আল্লাহ যাকে চান আরো বাড়িয়ে দেন, আল্লাহ অতিশয় দানশীল সর্বজ্ঞ। (সুরা আল-বাকারা : ২৬১) আলোচ্য আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) একটি হাদিস উদ্ধৃত করেছেন। ইয়াজ ইবনে গাতিফ বলেন, হজরত আবু উবায়দা (রা.) পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হলে আমরা তাঁকে দেখতে গেলাম। তখন তাঁর স্ত্রী তাঁর মাথার কাছে বসা ছিলেন। আমরা তাঁকে আবু উবায়দা (রা.)-এর অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, তিনি অত্যন্ত যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে রাত্রি অতিবাহিত করেছেন। এ সময় হজরত আবু উবায়দা (রা.)-এর মুখ দেয়ালের দিকে ফেরানো ছিল। স্ত্রীর কথা শুনে তিনি আগত মেহমানদের দিকে ফিরে বললেন : না, আমি রাত কঠিন যন্ত্রণার মধ্যে কাটাইনি। কেননা আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন : যে ব্যক্তি একটি পয়সা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, সে সাতশত পয়সা ব্যয় করার সওয়াব লাভ করে। যে ব্যক্তি নিজের জন্য ও পরিবারবর্গের জন্য ব্যয় করে, সে দশগুণ সওয়াব লাভ করে। যে ব্যক্তি রোগাগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেখতে যায়, সেও দশগুণ সওয়াব লাভ করে। আর রোজা যতক্ষণ বহাল থাকে ততক্ষণ উহা ঢালস্বরূপ। যে ব্যক্তি শারীরিক বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট, রোগ-ব্যথায় আক্রান্ত হয়, উহা তার পাপসমূহ ঝেড়ে পরিষ্কার করে দেয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির : খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৬৬)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর রাস্তায় যারা স্বীয় সম্পদ ব্যয় করে, তাদের জন্য জান্নাতে বিশেষ পুরস্কারের আয়োজন করবেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) নবী করিম (স.) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। নবী করিম (স.) বলেছেন : যে মুসলমান অপর কোনো মুসলমানের আবরু ঢাকার জন্য কাপড় দান করবে, আল্লাহ তাআ’লা তাকে জান্নাতের সবুজ পোশাক পরাবেন। যে মুসলমান অপর কোনো মুসলমানের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য আহার করাবে, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল দিয়ে আহার করাবেন। যে মুসলমান অপর মুসলমানের তৃষ্ণা নিবারণ করার জন্য পানি পান করাবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে জান্নাতের মোহরকৃত, সুগন্ধযুক্ত শরবত পান করাবেন। (সুনানে আবু দাউদ : ১৬৮২, সুনানে তিরমিজি : ২৪৪৯, আস্-সুনানুল কুবরা : ৭৮০৫, বায়হাকি শুআবুল ইমান : ৩০৯৮, মুসনাদে আহমাদ : ১১১০২)। সুতরাং মাহে রমজান সব মুসলমানের সামনে আল্লাহর রাস্তায় দান করে জান্নাতের অধিকার লাভের সুযোগ এনে দিয়েছে, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।