ধোপাখোলা স্টেশন

যশোর বনগাঁ রুটে ছোট্ট একটি স্টেশন ছিল ধোপাখোলা। কালে কালে সেটি হয়ে গেছে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি। একসময় এই স্টেশনই ছিল আশেপাশের মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দূরদূরান্ত থেকে কৃষক, ব্যবসায়ী আর যাত্রীজন গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি আর পায়ে হেঁটে আসতেন ট্রেনে চড়তে। জমজমাট সেই ধোপাখোলা এখন যেন নিঃসঙ্গ কোনও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
রেলপথের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, সময়ের চাহিদা মেটাতে ধোপাখোলা স্টেশন স্থাপন করা হয়েছিল ১৮৮৪ সালে। (বেঙ্গল সেন্ট্রাল রেলওয়ে নামে ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি শিয়ালদহ থেকে খুলনা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করে। এর মাধ্যমে ১৮৮৪ সালে প্রথমবার যশোরে ব্রড গেজ রেললাইন বনগাঁ-যশোর-খুলনা চালু হয়)।
স্থানীয় কৃষিপণ্য পরিবহন, শহরে যাতায়াত এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সেতুবন্ধন হিসেবে স্টেশনটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যশোর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত যে ট্রেন চলাচল করে, সেই ট্রেনগুলো একসময় এখানে দাঁড়াত। স্টেশন এলাকায় থাকত ব্যস্ত কর্মচাঞ্চল্য, মালপত্রের স্তুপ, হকারদের হাঁকডাক আর যাত্রীদের ভিড়।
কিন্তু সময় বদলেছে। মানুষের যাতায়াতের ধরন পাল্টেছে। সড়কপথে পরিবহন ব্যবস্থা সহজলভ্য হয়েছে। আর সেই সাথে ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারিয়েছে ধোপাখোলা। বহু বছর আগে বন্ধ হয়ে যায় এই স্টেশনের কার্যক্রম। প্ল্যাটফর্মের ইটের গায়ে এখন লতাপাতা আর আগাছার আস্তরণ। রাতে শিয়ালের ডাক ছাড়া কোনও শব্দ শোনা যায় না।
এখনও প্রতিদিন ট্রেন যায় যশোর থেকে বেনাপোল, কিন্তু আর এই স্টেশনে থামে না। রেললাইন পেরিয়ে যখন দূরগামী ট্রেন ছুটে যায়, ধোপাখোলা স্টেশনের পরিত্যক্ত চৌকাঠে তখন যেন অতীত দিনের স্মৃতি ভিড় করে। স্থানীয়দের আক্ষেপ যদি স্টেশনটা সচল থাকত, তাহলে এলাকার মানুষের অনেক সুবিধা হতো। আবার কেউ কেউ বলেন, এখন আর যাত্রী পাওয়া যাবে না, তাই বন্ধ হয়ে গেছে।