পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জয় লাভ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা। মমতার দলের কাছে বড় ধরনের পরাজয় ঘটেছে মোদির বিজেপি। নাইহাটি, হাড়োয়া, মেদিনীপুর, তালড্যাংরা, সিতাই (তফসিলি জাতি) এবং মাদারিহাট (তফসিলি জনজাতি) আসনের এই উপনির্বাচনে গতকাল শনিবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় গণনা। তারপর থেকেই প্রতিটি আসনেই তৃণমূলের প্রভাব বোঝা যাচ্ছিল। আর এখন তা সত্য প্রমাণিত হলো। সব কয়টিতেই জয়লাভ করেছে দলের প্রার্থীরা। এদিকে, মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে ভরাডুবির পথে বিজেপি।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী বিধায়করা তাদের আসন ছেড়ে দিলে এই উপনির্বাচনের প্রয়োজন হয়। নির্বাচনি ফলাফল রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। অনেকেই মনে করেছিলেন, সম্প্রতি আরজি কর কাণ্ডের প্রভাব পড়তে পারে এই নির্বাচনে। যদিও তেমন কিছুই হয়নি।

আসনভিত্তিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে বিজেপির শোচনীয় পরাজয়। বিজেপির জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা, বিশেষত মাদারিহাটের মতো আসনে। এই আসনে তারা আগে জয়ী হয়েছিল। রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এই ফলাফল আমাদের প্রতি জনগণের আস্থার প্রমাণ। আমরা মানুষের জন্য কাজ করেছি এবং তারা আমাদের সেই কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে।

সিতাইয়ে তৃণমূল প্রার্থী সঙ্গীতা রায় বিপুল ভোটে জয়ী হন। তিনি এক লাখ ৬৫ হাজার ৯৮৪ ভোট পেয়ে বিজেপির দীপক কুমার রায়কে (৩৫ হাজার ৩৪৮ ভোট) এক লাখ ৩০ হাজার ৬৩৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন।

মাদারিহাটে তৃণমূলের জয়প্রকাশ টপ্পো ৭৯ হাজার ১৮৬ ভোট পেয়ে বিজেপির রাহুল লোহারকে (৫১ হাজার ১৮ ভোট) হারিয়েছেন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনটি বিজেপির দখলে ছিল।

নাইহাটিতে তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে ৭৮ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। বিজেপি প্রার্থী রূপক মিত্র পান ২৯ হাজার ৪৯৫ ভোট।

হাড়োয়ায় তৃণমূল প্রার্থী এসকে রবি উল ইসলাম এক লাখ ৫৭ হাজার ৭২ ভোটে বিশাল ব্যবধানে জয় লাভ করেন।

মেদিনীপুরে তৃণমূল প্রার্থী সুজয় হাজরা এক লাখ ১৫ হাজার ১০৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তিনি বিজেপি প্রার্থী শুভজিৎ রায়কে (৩৩ হাজার ৯৯৬ ভোট) বড় ব্যবধানে হারিয়েছেন।

এদিকে, মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল আঞ্চলিক দলগুলোর গুরুত্ব আবারও প্রমাণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) কার্যকরী সভাপতি কেটি রামা রাও। শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে করা এক পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে কংগ্রেসের শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে ব্যর্থতাকে তুলে ধরে তাদের আঞ্চলিক দলগুলোকে দুর্বল করার চেষ্টার জন্য অভিযুক্ত করেন।

রামা রাও লেখেন, ‘বার্তাটি স্পষ্ট! মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনি ফলাফল প্রমাণ করে যে আঞ্চলিক দলই ভারতের রাজনীতির মেরুদণ্ড। কংগ্রেস শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে ব্যর্থ এবং তারা আঞ্চলিক দলগুলোকে দুর্বল করার চেষ্টায় মগ্ন। এটি একটি ধারাবাহিক প্রবণতা, যা অনেক কিছু প্রকাশ করে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহায়ুতি জোট নির্ণায়ক জয়ের পথে। ঝাড়খণ্ডে, জেএমএম নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট ৮১টি আসনের মধ্যে ৫০টিতে এগিয়ে আছে, যেখানে এনডিএ ৩০টি আসনে এগিয়ে।