ইস্টার যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগে মুখোমুখি রাশিয়া-ইউক্রেন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষিত ৩০ ঘণ্টার ‘ইস্টার যুদ্ধবিরতি’ শেষ হওয়ার পরই ইউক্রেন ও রাশিয়া একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ এনেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, গতকাল রোববার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকেই রুশ বাহিনী প্রায় তিন হাজার বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। খবর বিবিসির।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের হামলা প্রতিহত করেছে এবং কিয়েভ শত শত ড্রোন ও গোলাবারুদ ছুড়েছে। তবে এই দাবি-প্রতিদাবির কোনো স্বাধীন যাচাই এখনও সম্ভব হয়নি।
এর আগে, পুতিন গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) ঘোষণা দেন, মস্কো সময় সন্ধ্যা ৬টা (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) থেকে রোববার (২০ এপ্রিল) মধ্যরাত পর্যন্ত সব ধরনের সামরিক অভিযান বন্ধ থাকবে। কিয়েভও একই প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে যুদ্ধবিরতির সময়ই বেশ কয়েকটি সংঘর্ষ ও গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
জেলেনস্কি এ সময় বলেন, “আমরা নিরবতার জবাবে নিরব থাকব, কিন্তু রাশিয়ার হামলার জবাবে প্রতিরক্ষা হামলা চালানো হবে।”
তিনি আরও প্রস্তাব দেন, আগামী ৩০ দিনের জন্য—বা প্রয়োজনে আরও বেশি সময়—নাগরিক স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ রাখা হোক।
তবে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পুতিনের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা সম্পর্কে বলেন, এটি শুধুই “পিআর স্টান্ট” এবং “ফাঁকা বুলি”। তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে “মিথ্যা যুদ্ধবিরতির আবরণে বাস্তব যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার” অভিযোগ আনেন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তাদের সেনারা যুদ্ধবিরতি কঠোরভাবে পালন করেছে। একই সঙ্গে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা অভিযোগ করেন, ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির সময় মার্কিন সরবরাহকৃত হিমারস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।
যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, পুতিন এই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর কোনো নির্দেশ দেননি।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আশা করি রাশিয়া ও ইউক্রেন এই সপ্তাহেই একটি চুক্তিতে পৌঁছাবে”, তবে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
ব্রিটিশ সরকার এই যুদ্ধবিরতিকে “এক দিনের স্টান্ট” বলে উল্লেখ করেছে এবং বলেছে, এ সময়ও রুশ হামলায় নিরীহ ইউক্রেনীয়রা হতাহত হয়েছে। ব্রিটেন আরও বলেছে, এটি আগের ভুয়া যুদ্ধবিরতির পুনরাবৃত্তি।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা পূর্ণাঙ্গ ও বাস্তব যুদ্ধবিরতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এই প্রচেষ্টা যদি দ্রুত সফল না হয়, তবে তারা এই উদ্যোগ থেকে সরে যাবে।
ইস্টার সানডেতে কিয়েভ ও রুশ-নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্কে গির্জার প্রার্থনায় অংশ নেওয়া মানুষজন যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানায়।
এক কিয়েভবাসী আইনজীবী বলেন, “আমি মনে করি না যে পুতিন নামের এই ব্যক্তির মানবতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক আছে।”
অন্যদিকে, দোনেৎস্কে বসবাসকারী এক ব্যক্তি বলেন, “জেলেনস্কির কাছ থেকে কোনো স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি শুনিনি যে তারা যুদ্ধবিরতির শর্ত মানবে।”