হামলার প্রতিশোধ নিতে সেনাবাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিলেন মোদি

জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় প্রতিশোধ নিতে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এনডিটিভির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের সময় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিশোধ আঘাত হানা জাতীয় সংকল্প। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্বের সক্ষমতার ওপর আমার ‘পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ আছে। কবে, কখন কোন সময় আঘাত হানতে হবে সে ব্যাপারে আপনাদের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।’
এই বৈঠকের পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং ক্ষমতাসীন বিজেপির আদর্শিক পরামর্শদাতা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবত প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গেছেন।
সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটি সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা।
উল্লেখ্য, পুলওয়ামা হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে জইশ-ই-মোহাম্মদের সন্ত্রাসী শিবিরে বিমান হামলা চালিয়েছিল। পেহেলগাম হামলার দায় স্বীকার করেছে লস্কর-ই-তৈয়বার একটি ছদ্মবেশী সংগঠন—দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত পাকিস্তানের ওপর কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। প্রথম দফায় পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে, শুধু পাক হিন্দু ও দীর্ঘমেয়াদি ভিসাধারীরা এর আওতার বাইরে রেখেছে। এছাড়া দেশটির মেডিকেল ভিসাও বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে গত ২৭ এপ্রিল থেকে পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ইস্যু করা সমস্ত ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।

এ ছাড়াও, ভারত সিন্ধু পনি চুক্তি স্থগিত করেছে, যা পাকিস্তানের পানি সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। পাকিস্তান এই পদক্ষেপকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে অভিহিত করেছে এবং ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রত্যাহার ও ভারতীয়দের বহিষ্কার করেছে।
এই পরিস্থিতিতে একজন শীর্ষ পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ আগামী কয়েক দিনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন।
পেহেলগাম হামলার বিষয়ে তার প্রথম প্রকাশ্য মন্তব্যে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং বলেছেন, তার সরকার সন্ত্রাসবাদের ‘দুষ্ট অ্যাজেন্ডা’ সফল হতে দেবে না। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল ধ্বংস করার সময় এসেছে এবং ১৪০ কোটি ভারতীয়ের সম্মিলিত শক্তি সন্ত্রাসের মদতদাতাদের কোমর ভেঙে দেবে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদি সন্ত্রাসীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ভারত সন্ত্রাসবাদে ভীত নয় এবং এই হামলার পরিকল্পনাকারীসহ প্রত্যেককে খুঁজে বের করে জবাবদিহি করবে।