‘ইসরায়েলে ইরানের হামলা অব্যাহত থাকবে’

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের হামলা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা। এই মন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত আরও বাড়ার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পাল্টাপাল্টি আক্রমণের পর উভয় দেশই এখন তাদের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। খবর আল-জাজিরার।
সংঘাতের সূত্রপাত
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইসরায়েল তাদের দীর্ঘস্থায়ী শত্রু ইরানের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিমান আক্রমণ শুরু করার মাধ্যমে সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে। এই হামলায় ইরানের সামরিক কমান্ড ও পারমাণবিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
ইরান জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় তাদের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাসহ ৭৮ জন নিহত ও ৩২০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি, সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি এবং গার্ডের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির প্রধান জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহ-এর মতো শীর্ষস্থানীয় সামরিক কমান্ডাররা রয়েছেন। এছাড়া, ছয়জন পারমাণবিক বিজ্ঞানীও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন বলে তেহরান নিশ্চিত করেছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই অভিযানকে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ হিসেবে অভিহিত করে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ঘোষণা দেন।
ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলা ও ইসরায়েলে হতাহত
ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইরান শনিবার ভোরে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই হামলায় ইসরায়েলে তিনজন নিহত এবং কমপক্ষে ৭১ জন আহত হয়েছেন বলে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরান থেকে কয়েক ডজন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় বাধাগ্রস্ত হয়েছে। মার্কিন গ্রাউন্ড-ভিত্তিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও একটি নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার ইসরায়েলকে এই ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে সহায়তা করেছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তেল আবিবের আশেপাশেও ড্রোন দেখা গেছে এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যা সেখানকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে।
‘সীমিত পদক্ষেপ’ নয়, হামলা চলবে
ইরানের ফার্স সংবাদ সংস্থা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ‘গত রাতের সীমিত পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সংঘর্ষ শেষ হবে না এবং ইরানের হামলা অব্যাহত থাকবে। এই পদক্ষেপ আক্রমণকারীদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক এবং দুঃখজনক হবে।’
এ বিবৃতি ইরানের প্রতিশোধমূলক আক্রমণের ধারাবাহিকতা ও তীব্রতা বৃদ্ধির স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) নতুন কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ পাকপৌর ইসরায়েলকে ‘নরকের দরজা’ খুলে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও আঞ্চলিক প্রভাব
এই সংঘাতের জেরে আন্তর্জাতিক মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উভয় পক্ষকে ‘যথেষ্ট উত্তেজনা, থামার সময় এসেছে, শান্তি ও কূটনীতি অবশ্যই জয়ী হবে’ বলে আহ্বান জানিয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের আক্রমণ থেকে নিজেদের দূরে রাখার চেষ্টা করলেও, একই সঙ্গে ইরানকে এই অঞ্চলে আমেরিকান ঘাঁটিতে কোনো হামলার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যে এই অভিযানের সঙ্গে তার পূর্ববর্তী সতর্কবার্তার যোগসূত্র নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।