পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ চলবে, আলোচনার পথও খোলা : ইরান

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানিয়েছেন, ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি পরিত্যাগ করবে না, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছে।
সোমবার (২১ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আরাগচি বলেন, “আমাদের সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি এখন স্থগিত রয়েছে। কারণ সম্প্রতি মার্কিন ও ইসরায়েলি বিমান হামলায় গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। তবে এটি আমাদের বিজ্ঞানীদের কৃতিত্ব এবং জাতীয় গৌরবের প্রতীক। কাজেই আমরা এটি ত্যাগ করতে পারি না।” খবর আল জাজিরার।
তবে সাক্ষাৎকারের শুরুতেই তিনি বলেন, “আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত, যদিও এখনই সরাসরি আলোচনা নয়।”
আরাগচি আরও বলেন, “যদি তারা (যুক্তরাষ্ট্র) একটি ‘উইন-উইন’ সমাধানের জন্য আসে, আমি আলোচনায় প্রস্তুত। আমরা যেকোনো বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত, যাতে প্রমাণ হয় আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং এটি ভবিষ্যতেও শান্তিপূর্ণই থাকবে। বিনিময়ে আমরা চাই, তারা তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিক।”
এই মন্তব্যগুলো ফক্স নিউজে প্রচারিত ১৬ মিনিটের এক সাক্ষাৎকারের অংশ।
সাক্ষাৎকারে আব্বাস আরাগচি বলেন, “আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচির একটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান রয়েছে। আমরা অতীতেও এটি করেছি, আবারও করতে প্রস্তুত।”
উল্লেখ্য, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র এর আগে চলতি বছর পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেছিল। এর আগে ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি (জেসিপিওএ) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়।
চুক্তির আওতায় ইরান আন্তর্জাতিক পরিদর্শনের জন্য তারা পারমাণবিক স্থাপনাগুলো উন্মুক্ত করেছিল এবং এর বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
ট্রাম্পের প্রত্যাহার চূড়ান্ত হয় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবির পর, যেখানে তিনি ইরানের বিরুদ্ধে “গোপন পারমাণবিক কর্মসূচি” চালানোর অভিযোগ আনেন।
ইরান অবশ্য শুরু থেকেই দাবি করে আসছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি কেবলমাত্র বেসামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য।
চলতি বছরের ১৩ জুন ইসরায়েল হঠাৎ করে ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়, যার ফলে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার আলোচনা ভেঙে পড়ে।
এই হামলায় ইরানে ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয় এবং ইসরায়েলে নিহত হয় অন্তত ২৮ জন। ২৪ জুন দুই পক্ষের মধ্যে একটি অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়।
পেন্টাগনের দাবি, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে দিয়েছে।
আরাগচি জানান, ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থা এখনও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা মূল্যায়ন করছে এবং শিগগিরই আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) কে এ সম্পর্কে অবহিত করা হবে।
তিনি বলেন, আইএইএ পরিদর্শক পাঠানোর অনুরোধ এলে তা “সতর্কভাবে বিবেচনা” করা হবে।
যদিও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান এ মাসের শুরুতে আইএইএ-র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে একটি আইন স্বাক্ষর করার পর সংস্থার পরিদর্শকরা দেশটি ছেড়ে চলে যায়।
এর আগে ১২ জুন আইএইএ বোর্ড ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে একটি প্রস্তাব পাস করে, যেটিকে ইরান “ইসরায়েলের হামলার অজুহাত” বলে বর্ণনা করেছে।

এদিকে সোমবার জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানান, জাতিসংঘ “ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের আসন্ন আলোচনাকে স্বাগত জানায়।”
ইরান, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এই আলোচনা তুরস্কে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
যদি ইরান আলোচনায় ফিরে না আসে, তাহলে আবার আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে এই তিন ইউরোপীয় দেশ।