গাজা পুরোপুরি দখলের সিদ্ধান্ত ‘ইসরায়েলের ওপর নির্ভর করছে’ : ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজা পুরোপুরি দখলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া “মূলত ইসরায়েলের বিষয়”। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন। খবর আল জাজিরার।
প্রশ্ন করা হয়েছিল, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা ভূখণ্ড সম্পূর্ণভাবে দখল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না—এ বিষয়ে তিনি কী মনে করছেন। জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমি এখন গাজায় মানুষদের খাওয়ানোর দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। বাকি বিষয়গুলো ইসরায়েলের ওপর নির্ভর করছে।”
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর ইসরায়েলকে বিপুল পরিমাণ সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই সহায়তার পরিমাণ আরও বেড়েছে।
ইসরায়েল গাজাজুড়ে ফোর্সড ডিসপ্লেসমেন্ট (জবরদস্তি স্থানান্তর) এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের সীমিত এলাকায় আটকে রেখেছে। বর্তমানে গাজার প্রায় ৮৬ শতাংশ এলাকাকে ‘সামরিকীকৃত অঞ্চল’ ঘোষণা করা হয়েছে।
নতুন করে গাজা দখলের পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য আরও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, তারা প্রতিদিনই বোমা হামলা ও কৃত্রিম দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হচ্ছে।
ইসরায়েলের দখলের এই পরিকল্পনা গাজায় বন্দি থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের নিরাপত্তা নিয়েও নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।
জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মিরোস্লাভ ইয়েনচা মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, “গাজা সম্পূর্ণ দখলের চেষ্টা মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আন্তর্জাতিক আইন স্পষ্টভাবে বলে, গাজা ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হতে হবে।”
২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা ও বসতি প্রত্যাহার করলেও, আকাশপথ, সমুদ্রসীমা ও বন্দর নিয়ন্ত্রণে রেখে সেটিকে কার্যত দখলেই রেখেছে বলে আইনি বিশ্লেষকরা মনে করেন।
২০২৩ সালের যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থীরা গাজায় আবারো সামরিক উপস্থিতি ও বসতি স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও বারবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি গাজার সমস্ত ফিলিস্তিনিকে সেখান থেকে উৎখাত করতে চান—যা জাতিগত নির্মূলকরণের সমতুল্য। এমন পরিকল্পনাকে এর আগেও সমর্থন করেছিলেন ট্রাম্প। ফেব্রুয়ারিতে তিনি বলেছিলেন, গাজাকে ফাঁকা করে সেখানে “মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা” গড়ে তোলা যেতে পারে।
বর্তমানে গাজায় মানবিক দুর্ভিক্ষ প্রকট আকার ধারণ করেছে। মার্চ মাস থেকে ইসরায়েল প্রায় সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রেখেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত জিএইচএফ (গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান ফান্ড) কেন্দ্রগুলোই খাদ্যের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে।
এই কেন্দ্রগুলোতে খাবারের জন্য যাওয়া বহু ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলি সেনারা গুলি করে হত্যা করেছে। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র জিএইচএফকে সমর্থন দিতে থাকে এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের আন্তর্জাতিক আহ্বান উপেক্ষা করে।
সাম্প্রতিক দিনে কিছু খাদ্য ট্রাক ও আকাশপথে ত্রাণ ফেলার অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল, তবে তা বাস্তব চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। অভিযোগ রয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা জিএইচএফ কেন্দ্রের বাইরের এলাকায় খাবার নিতে আসা সাধারণ মানুষদের ওপরও হামলা চালাচ্ছে।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, “যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি গাজায় খাদ্য সহায়তা বাবদ ৬০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে, যার মধ্যে ৩০ মিলিয়ন ডলার জিএইচএফকে দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমি জানি ইসরায়েল আমাদের সঙ্গে এই বিতরণ ও অর্থে সাহায্য করবে এবং আরব দেশগুলোকেও আমরা অন্তর্ভুক্ত করছি।”

এদিকে, ইসরায়েলের অব্যাহত বোমা হামলা ও সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অধিকাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে স্পষ্ট গণহত্যা বলে আখ্যা দিয়েছে।