স্ত্রী অবাধ্য, তাই মাঝেমধ্যে পেটাতেন তিনি!

স্ত্রী কিছুটা অবাধ্য ও চলাফেরায় বেপোরোয়া। তাই মাঝেমধ্যে ঝগড়া বিবাদ হলে স্ত্রীকে পেটাতেন তিনি!
তিনি তানজিমুল হক খান। নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার ডিগ্রি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক । তাঁর স্ত্রী একই কলেজের একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উম্মে কুলসুম মুগ্ধা।
মাথা, ঘাড় ও বাহুতে আঘাত নিয়ে উম্মে কুলসুম বর্তমানে নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উম্মে কুলসুম অভিযোগ করেছেন তিনি স্বামী তানজিমুলের নির্যাতনের শিকার।
নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মাহফুজার রহমান জানিয়েছেন, মাথা, ঘাড় ও বাহুতে আঘাত নিয়ে গত ২৮ জুলাই দুপুরে উম্মে কুলসুম হাসপাতালে ভর্তি হন। গত ২৯ জুলাই তাঁর মাথা ও ঘাড়ের বিভিন্ন ক্ষত পরীক্ষার জন্য একাধিক এক্সরে করা হয়। তাঁকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তাঁর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলেও জানান চিকিৎসক।
হাসপাতালে উম্মে কুলসুম সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘আমার স্বামী তানজিমুল হক আমার ওপর এই নির্যাতন চালিয়েছেন।’
উম্মে কুলসুম বলেন, ‘তানজিমুলের সঙ্গে অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে। এতে বাধা দিলেই নির্যাতন চালান তিনি। এমনকি একাধিকবার শারীরিক নির্যাতনও চালিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া আমার চাকরির বেতনের চেক বই নিয়ে সেখানে জাল সই করে প্রতি মাসের বেতনের টাকা তুলে নেন তিনি। প্রয়োজনের টাকা চাইতে গেলেও ঝগড়া করতেন তিনি।’
বিয়ের পর থেকেই স্বামী তানজিমুল কারণে-অকারণে তাঁর ওপর নির্যাতন করেন বলেও অভিযোগ করেন উম্মে কুলসুম। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে বেশ কয়েকবার পারিবারিকভাবে বৈঠক বসে মীমাংসা হলেও কোনো সমাধান হয়নি বরং ক্রমেই নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে তানজিমুল।’
উম্মে কুলসুম জানান, গত ২৭ জুলাই বিকেলে আবারও শারীরিক নির্যাতন চালান স্বামী তানজিমুল। খবর পেয়ে কুলসুমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন কুলসুমের বড় ভাই রহিদুল আলম।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তানজিমুল হক স্ত্রীর ওপর শারীরিক নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে তানজিমুল হক বলেন, ‘আমার স্ত্রী কিছুটা অবাধ্য ও চলাফেরায় বেপরোয়া।’ তাই মাঝেমধ্যে ঝগড়া বিবাদ হলে তাঁকে পেটাতেন তিনি। তবে পরকীয়ার ব্যাপারে করা অভিযোগটি মিথ্যা বলে দাবি করেন তানজিমুল।
কুলসুমের সহকর্মী রোকসানা শারমিন বলেন, ‘এর আগেও তানজিমুল কুলসুমকে বেশ কয়েকবার মারধর করেছেন। সেসব নির্যাতনে কুলসুমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে এখনো ক্ষত চিহ্নের দাগ রয়েছে। কিন্তু স্বামী সংসার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বিষয়গুলো নিয়ে থানা পুলিশ বা আদালতে মামলা মোকদ্দমায় যাননি তিনি।’
জেলার মহাদেবপুর উপজেলার বাগাচারা গ্রামের বাসিন্দা উম্মে কুলসুম জানান, তাঁদের একটি কন্যা সন্তান আছে। প্রায় ১৫ বছর আগে মান্দা উপজেলার ফেটগ্রামের বাসিন্দা তানজিমুলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের সময় তানজিমুল যৌতুক গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ করেন কুলসুম।
এ ব্যাপারে সন্ধ্যায় মান্দা থানায় মামলা দায়ের করেছেন কুলসুম। মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) কামরুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, ‘উম্মে কুলসুম তাঁর স্বামী তানজিমুল হককে আসামি করে নারী নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।’