কারাগারে অভিনেত্রী, ফেসবুকে তারকাদের ক্ষোভ : ফারিয়ার অপরাধটা কী?

চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের ঘটনায় বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনের একাধিক তারকা পরিচালক ও শিল্পীরা সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফারিয়ার গ্রেপ্তারকে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘বিচারপ্রক্রিয়ার অপব্যবহার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
জনপ্রিয় পরিচালক আশফাক নিপুণ কড়া সমালোচনা করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এভাবেই দিনে দিনে প্রকৃত খুনী এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দুর্বল করতে অন্যদের সফট টার্গেট করা হয়ে আসছিল এবং করা হচ্ছে। এটাকে আর যাই হোক, সংস্কার বলে না সরকার। হত্যাচেষ্টার যে মামলা করা হল এবং যে হত্যার সময় তিনি দেশেই ছিলেন না, সেই অভিনেতা নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার এবং কারাগারে প্রেরণ দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ইঙ্গিতই দেয়। আমরা জুলাই গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার চাইছিলাম। কোনরকম প্রহসন চাই নাই, এখনো চাই না। চিহ্নিত অপরাধীদের পালিয়ে যাওয়া/পালাতে দেয়া এবং ঢালাও গায়েবী মামলাবাজির নাটক বন্ধ করেন।’
অভিনেতা খাইরুল বাসার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘উনি অভিনেত্রী, উনার কাজ অভিনয় করা। কোন গল্পে যে চরিত্রটা পাবেন সে চরিত্রের যথাযথ প্রকাশ সে করবেন; এই উনার কাজ। আমার ধারণা উনি রাজনীতি সচেতনও না এবং উনি কোন রাজনীতি করেনও না, এমনকি বিটিভিতে গিয়ে মায়া কান্নাও করেন নাই। তাহলে একটা সিনেমায় অভিনয় করাকে কেন্দ্র করে কেন এই হেনস্তা? ওই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সকলকেই অডিশনের জন্য ডাকা হয়েছিল, অনেকেই অডিশন দিয়েছেন। যারা অডিশন দিয়ে সিলেক্টেড হয়েছেন তারাই অভিনয় করেছেন।’
খায়রুল বাসার দাবি করেন যে, নুসরাত ফারিয়ার সাথে অন্যায় হচ্ছে। তিনি লিখেন, ‘এটা সিম্পল! এখানে কেউ রাজনীতি করতে যাননি। অভিনেত্রী হিসেবে একটা সিনেমায় অভিনয় করা কোন ক্রাইম না। নুসরাত ফারিয়ার সাথে অন্যায় হচ্ছে। বর্তমান সরকার যদি শিল্পীদের কোন রাষ্ট্রীয় আয়োজনে ডাকেন এক্ষেত্রে শিল্পীদের করণীয় কি হবে?’
সরকার বদলে শিল্পীরা হেনস্থা স্বীকার হতে থাকে জানিয়ে বাসার বলেন, ‘এই সরকার পরবর্তীতে অন্য সরকার তাদের হেনস্তা করবে এই মেনে হুকুমের দাস হবে? নাকি শিল্পীরা কখনোই কোন সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় আয়োজনের অংশ হবে না? মিডিয়া সংশ্লিষ্ট যারা আছেন আপনারা কমেন্টে মতামত জানাতে পারেন।’
অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই মেয়েটির কোনো দোষ নেই। সে মোটেই দায়ী নয়। যারা ফ্যাসিবাদী শাসন চালিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে, তাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।’
অভিনেত্রী আরও লিখেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি এবং ব্যবস্থা নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা এমন দেশে বাস করি না, যেখানে ন্যায়বিচার সাধারণভাবে প্রচলিত। তবে এবারের ঘটনাটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
নির্মাতা-অভিনেতা শরাফ আহমেদ জীবন আরও একধাপ বিস্তারিত লিখলেছেন এই ইস্যুতে। বললেন, ‘একটু আগে একটা চ্যানেলের লাইভে দেখলাম নুসরাত ফারিয়াকে আদালতে নেয়া হচ্ছে! কোন এক অদ্ভুত কারণে মনটা খারাপ হয়ে গেলো! বুঝার চেষ্টা করলাম। নুসরাত ফারিয়ার অপরাধটা কী?’
এরপর তিনি নুসরাত ফারিয়ার দুটি অপরাধ বের করেন। একটি, ‘মুজিব’ সিনেমায় অভিনয় করা! অন্যটি, জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার সাথে ফারিয়াও হত্যা মামলার আসামী!
‘চক্কর’ নির্মাতা তিরস্কারের সুরে বলেন, ‘‘কী ভয়ংকর হাস্যকর! নুসরাত ফারিয়া একজন শিল্পী! সে ‘মুজিব’ সিনেমায় অভিনয় করেছে! আরও অনেক শিল্পীই অভিনয় করেছে! অনেক শিল্পী অডিশন দিয়েছে। বাদ পড়েছে। অনেকে নানাভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল! তাহলে তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হবে?’’
এরপর বাস্তবতার কথা তুলে ধরে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’খ্যাত অভিনেতা, ‘আমি, ভাবছি আমার কথা! নুসরাত ফারিয়ার জায়গায় আমিও থাকতে পারতাম! আমাকে ডাকলে আমিও যেতাম। কারণ দুইটা- ১. আমি শিল্পী। শিল্পীর কাজ হলো যে কোনও শিল্প মাধ্যমে নিজেকে যুক্ত করা। ২. ক্ষমতা! এইটার ব্যাখ্যা দরকার নাই! এখন আসি আসল কথায়, বর্তমান সরকার কোনও শিল্পীকে সরকারি কোনও কাজে ডাকলো এবং পরের সরকার এসে গ্রেফতার করলো! হইতেই পারে। তাইলে শিল্পীদের কী করা উচিত! দেশের বা রাষ্ট্রীয় কোনও কাজে অংশগ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখা!’
শেষে আরও লেখেন, ‘‘এমন অনেক শিল্পী আছে, যারা অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। আমার ধারণা, সাধারণ মানুষ এতে খুশি হয়েছে। কারণ এরা আসলে প্রকৃতি শিল্পী ছিলো না! এরা ছিল শিল্পীর মুখোশধারী ক্ষমতালোভী! নুসরাত ফারিয়াকে আমার অন্তত এদের দলের মনে হয়নি! শেষমেশ, আমার ‘চক্কর’ সিনেমার একটা সংলাপ দিয়ে শেষ করি, ‘সব আলামত সত্যি হয় না। কিছু আলামত মূল কাজের ফোকাস নষ্ট কইরা দেয়।’ প্রিয় সরকার, আপনাদের ফোকাস নষ্ট কইরেন না প্লিজ!’’
এর আগে সকালে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেফতারের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।