‘মুজিব’ করে যদি কোনো সুবিধা নিয়ে থাকি, প্রমাণসহ সবাইকে জানান : আরিফিন শুভ

‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় করে আলোচনায় থাকা আরিফিন শুভ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে ছিলেন নিরব। গেল ৭ মাস সনি লিভের ‘জ্যাজ সিটি’ শিরোনামের একটি বলিউড প্রজেক্টে কাজ করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। ফিরেই গণমাধ্যমকে কথা বলেছেন তাঁর ১টা পারিশ্রমিক ইস্যু, প্লট বির্তকসহ নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে।
‘মুজিব’ অভিনয়ের জন্য এক টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছেন যে সমালোচনা আছে এ প্রসঙ্গে আরিফিন শুভ এই সমালোচনাকে বড় একতরফা বলছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, ‘শ্রমের মূল্য একজন মানুষ নিজেই নির্ধারণ করেন। এটাই কি স্বাভাবিক নয়? আপনি কি আপনার বেতন নিজে ঠিক করেন না? বলেন তো, এত টাকার কম হলে আমি এখানে জয়েন করব না; সেটা কি অপরাধ? আমি যদি ১০০ টাকায় সিনেমা করি, আর ‘মুজিব’ করতে ১০ হাজার টাকা নিই—তাহলে সমালোচনার জায়গা ছিল। তখনই সমালোচনা করতে পারতেন। কিন্তু আমি তো উল্টোটা করেছি। পারিশ্রমিক নিইনি। টাকা না নিয়ে চুরি-ডাকাতি করিনি, দেশের ক্ষতি করিনি। আর হ্যাঁ, এটা প্রথম না। কাজের ক্ষেত্রে টাকাকে আমি কখনো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিইনি। আমার কাছে গুরুত্ব পায় টিম, গল্প এসবই। সবশেষ ‘উনিশ ২০’র কথাই ধরুন, যে অঙ্কে চুক্তি হয়েছিল, পুরোটা নিইনি। কেন নিইনি, সেটা চাইলে প্রযোজকের কাছে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে পারেন।’
গুঞ্জন আছে, এক টাকা পারিশ্রমিকের বিপরীতে আরিফিন শুভ পূর্বাচলে রাজউকের জমিও পেয়েছেন। এই ইস্যু আরিফিন শুভ বলছেন, ‘এক টাকার পারিশ্রমিক আর পূর্বাচলের জমি এই দুটোকে এক সুতায় গেঁথে যে গল্পটা ছড়ানো হয়েছে, সেটা যতটা মুখরোচক, বাস্তবতা থেকে তা ঠিক ততটাই দূরে। ফেসবুকে তো যেকোনো কিছু বলা যায়, সেখানে প্রমাণ লাগে না, দায় নিতে হয় না। কিন্তু বাস্তবে তো জবাবদিহিতা আছে। আমি কি প্রথম শিল্পী, যে রাজউকের জমি পেয়েছি? ‘শিল্পী’ কোটায় আগেও ১৫১ জন প্লট পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তো কেউ ‘মুজিব’-এ ছিলেন না, কেউ এক টাকা পারিশ্রমিক নেননি। তাহলে তাঁরা কিভাবে পেলেন? আমি যেভাবে নিয়ম মেনে আবেদন করেছি, সরকার নির্ধারিত অর্থ জমা দিয়েছি, বাকিরাও ঠিক একইভাবে পেয়েছেন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে গল্পটা আলাদা করে বলা হচ্ছে, যেন এই দুটি ঘটনা [সিনেমা আর জমি] একে অন্যের বিনিময়। আসলে যারা এ ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য তথ্যভিত্তিক প্রশ্ন তোলা নয়, জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করা। আর আমরা জানি, বিভ্রান্তি তৈরির জন্য সত্যের চেয়ে মুখরোচক গল্পই বেশি কাজে দেয়।’

নিজের রাজনৈতিক অবস্থান প্রসঙ্গে আরিফিন শুভর ভাষ্য, ‘নির্বাচনে যেতে চাইলে তো মনোনয়নপত্র কিনতে হতো। আমি কি সেটা করেছি? নির্বাচনে দাঁড়াতে হলে তো রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে হয়। আপনি আমাকে কখনো দেখেছেন তেমন কিছু করতে? যখনই ‘মুজিব’ করলাম, তখন থেকেই নানা গুঞ্জন আমি নাকি এমপি হচ্ছি, এক টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছি সুবিধা পাওয়ার জন্য। অথচ বাস্তবে এমন কিছু ঘটেছে কি? ‘মুজিব’ করে আমি যদি কোনো বিশেষ সুবিধা নিয়ে থাকি, আপনি অনুসন্ধান করে প্রমাণসহ সবাইকে জানান। আর এই ছবি করার অনেক আগেই স্পষ্ট করে বলেছি, আমি কখনো রাজনীতিতে জড়াব না। এটি আমার সচেতন এবং ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কেউ চাইলে সেই বক্তব্যের রেকর্ডও খুঁজে পাবেন। রাজনীতি আমার পথ নয়, আমি শুধু অভিনয়টা বুঝি, আর সেটা নিয়েই থাকতে চাই।’
আগামীতে যদি আপনাকে জিয়াউর রহমানের বায়োপিকে অভিনয় করতে বলা হয়, করবেন? এমন প্রশ্নে আরিফিন শুভ বলছেন, বেন কিংসলে মহাত্মা গান্ধীর চরিত্র করেছেন, মরগান ফ্রিম্যান আর ইদ্রিস এলবা নেলসন ম্যান্ডেলার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তার মানে কি তাঁরা ওই গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হয়ে গেছেন? তাহলে আমার ক্ষেত্রে এ প্রশ্নটাই বা আসে কেন? আমি একজন অভিনেতা। আমার কাজ চরিত্রে ঢুকে সেই চরিত্রকে সত্য করে তোলা। আমাকে যেকোনো চরিত্রে পরিচালক যোগ্য মনে করলে, আমি বরাবরই প্রস্তুত।
আসছে ঈদে মুক্তি পাচ্ছে আরিফিন শুভর ‘নীলচক্র’ সিনেমা। এছাড়া মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘নূর’, ‘লহু’, ‘জ্যাজ সিটি’ ও ‘ঠিকানা বাংলাদেশ’।