Skip to main content
NTV Online

শিশু-কিশোর

শিশু-কিশোর
  • অ ফ A
  • জবর খবর
  • আজব
  • রহস্য
  • ধাঁধা
  • জানো কি
  • তোমাদের জন্য
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
Follow
  • শিশু-কিশোর
ছবি

বর্ণিল সাজে সেমন্তী সৌমি

লাল টুকটুকে মিম

একান্তে তাহসান-রোজা

মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর ৫ খাবার

মেট গালা ফ্যাশনে দ্যুতি ছড়ালেন কিয়ারা

গ্রীষ্মের ফুলে ভিন্নরূপে রাজধানীর প্রকৃতি

বিমান বাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণে প্রধান উপদেষ্টা

বিমান বাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ প্রধান উপদেষ্টার

পুলিশ সপ্তাহ শুরু

স্টাইলিশ মিম

ভিডিও
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, পর্ব : ১২
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫০
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫০
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ৯
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ৯
টেলিফিল্ম : প্রিয় অভিভাবক
টেলিফিল্ম : প্রিয় অভিভাবক
নাটক : প্রেম আমার
নাটক : প্রেম আমার
মহিলাঙ্গন : পর্ব ৩৫৯
মহিলাঙ্গন : পর্ব ৩৫৯
সংলাপ প্রতিদিন : পর্ব ২৪০
সংলাপ প্রতিদিন : পর্ব ২৪০
এই সময় : পর্ব ৩৮২১
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৬
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৬
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
রোজা শাওয়াল রিজওয়ান
১৫:৫০, ২৪ আগস্ট ২০১৬
আপডেট: ১৫:৫১, ২৪ আগস্ট ২০১৬
রোজা শাওয়াল রিজওয়ান
১৫:৫০, ২৪ আগস্ট ২০১৬
আপডেট: ১৫:৫১, ২৪ আগস্ট ২০১৬
আরও খবর
আমি মালালা বলছি: অজানার পথে যাত্রা
আমি মালালা বলছি: মালালা কে?
আমি মালালা বলছি: দীর্ঘাঙ্গী হওয়ার প্রার্থনা
আমি মালালা বলছি: আজব শান্তি
আমি মালালা বলছি: রক্তাক্ত চত্বর

আমি মালালা বলছি

‘তারা ওর হাসি কেড়ে নিয়েছিল’

রোজা শাওয়াল রিজওয়ান
১৫:৫০, ২৪ আগস্ট ২০১৬
আপডেট: ১৫:৫১, ২৪ আগস্ট ২০১৬
রোজা শাওয়াল রিজওয়ান
১৫:৫০, ২৪ আগস্ট ২০১৬
আপডেট: ১৫:৫১, ২৪ আগস্ট ২০১৬

বাবা-মা যেদিন বার্মিংহামের উদ্দেশে রওনা দিলেন, সেদিন আমাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র থেকে স্থানান্তর করে ৫১৯ নম্বর ওয়ার্ডের চতুর্থ কক্ষে আনা হলো, যেখানে জানালা ছিল এবং প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড দেখতে পেলাম। পর্বত কোথায়? আমি জিজ্ঞেস করলাম। কুয়াশা আর বৃষ্টি থাকায় আমি ভাবলাম, সেগুলোকে দেখা যাচ্ছে না, কেবল বাড়ি আর রাস্তাই দেখা যাচ্ছিল। বাড়িগুলো লাল ইটের তৈরি এবং প্রত্যেকটা দেখতে একদম একই রকম, সবকিছু ছিল শান্ত ও সুন্দর, মানুষের জীবন এমনভাবে চলছে এখানে যেন কিছুই ঘটেনি।

ড. জাভিদ বললেন যে আমার বাবা-মা আসছেন এবং তাঁরা আসার সময় আমি যাতে বসে তাঁদের অভ্যর্থনা জানাতে পারি, সে জন্য আমার বিছানাটা কাত করে দিলেন। আমি খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। চিৎকার করে বিদায় দিয়ে যে ১৬ দিন আগে আমি মিঙ্গোরার বাস থেকে দৌড়ে বেরিয়েছিলাম, এই ১৬ দিনে আমি চারটা হাসপাতাল ঘুরেছি এবং হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়েছি। মনে হচ্ছিল পরিচিত কণ্ঠে ‘জানি’ ও ‘পিশো’ শব্দগুলো শুনতে পেলাম, বাবা-মা এসেছেন। আমাকে ছুঁতে ভয় পাওয়ায় তারা কেবল আমার হাতে চুমো খাচ্ছিলেন।

আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। যতটা জোরে সম্ভব কাঁদলাম। হাসপাতালে আমার মাথা থেকে স্টেপল সরানোর সময় বা ঘাড়ে ওসব ইনজেকশন দেখানোর সময়ও আমি কাঁদিনি। কিন্তু তখন আর থামতে পারছিলাম না। আমার মা-বাবাও কাঁদছিলেন। মনে হচ্ছিল যেন বুকের পাষাণ ভার নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার মনে হলো, এখন সবকিছু ভালো হয়ে যাবে। আমার ভাই খুশালকে দেখেও আমি খুব খুশি ছিলাম। কারণ, মারামারি করার জন্যও আমার কাউকে দরকার ছিল। আমার ভাইয়েরা বলল, ‘মালালা, তোমার শূন্যতা আমরা অনুভব করেছি’, যদিও কিছুক্ষণের মাঝেই তারা টেডি বিয়ার আর উপহারগুলো নিয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠল এবং খুশাল গেমস খেলার জন্য আমার ল্যাপটপটা নিতেই আবার আমাদের মারামারি শুরু হলো।

মা-বাবার অবস্থা দেখে আমি যেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গেলাম। পাকিস্তান থেকে দীর্ঘ বিমানযাত্রায় তাঁরা ক্লান্ত ছিলেন কিন্তু সেটাই সব নয়, তাঁদের দেখে মনে হচ্ছিল যেন বয়স বেড়ে গেছে, দুজনের মাথাতেই পাকা চুলের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছিল, তাঁরা সেগুলো লুকানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তাঁদের দেখেই বোঝা গেল, আমি ওভাবে আসার আগে ড. জাভিদ তাঁদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন। আপনারা যে মেয়েটাকে দেখবেন সে কেবল ১০ ভাগ আরোগ্য লাভ করেছে, আরো ৯০ ভাগ এখনো বাকি। কিন্তু আমার মুখের একটা পাশ যে কাজ করছে না, আর আমি যে হাসতে পারছি না সে ব্যাপারে তাঁদের কোনো ধারণাই ছিল না। আমার বাঁ চোখে ফোলা, অর্ধেক চুল উধাও, আর মুখটা যেন একপাশে টেনে দেওয়া হয়েছে। তাই আমি যখন হাসার চেষ্টা করলাম, সেটা একটা ভেংচির মতো লাগল। যেন আমার মগজটা ভুলে গেছে, আমার মুখের বাম পাশ বলতে কিছু আছে, আমি এক কানে শুনতে পাচ্ছিলাম এবং বাচ্চাদের মতো আধো আধো উচ্চারণে কথা বলছিলাম।

আমার বাবা-মাকে শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে রাখা হয়। হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা লোকজন ভেবেছিল, তারা হাসপাতালে থাকলে সাংবাদিকরা তাদের ঘিরে ফেলবে, আমার আরোগ্যলাভ বাধাগ্রস্ত হবে। তাই প্রতি ধাপে তারা আমাদের রক্ষা করতে চেয়েছিল। গায়ের জামা আর শিজার মা সোনিয়াকে দেওয়া কাপড় ছাড়া বাবা-মায়ের কাছে তেমন কিছুই ছিল না। কারণ ৯ অক্টোবর সোয়াত ছাড়ার সময় তাঁরা জানতেন না যে সোয়াতে আর ফেরা হবে না। হোস্টেল কক্ষে ফিরে তাঁরা শিশুর মতো কাঁদলেন। আমি সব সময়ই খুব হাসিখুশি একটা বাচ্চা ছিলাম। বাবা মানুষের কাছে আমার স্বর্গীয় হাসি নিয়ে গর্ব করতেন। আর এখন তিনি বিলাপ করে মায়ের কাছে বললেন, ‘সেই অসাধারণ প্রতিসম মুখ, সেই ঝলমলে মুখ চলে গেছে, ওর হাসি হারিয়ে গেছে।’ ‘তালেবান খুব নিষ্ঠুর, তারা ওর হাসি কেড়ে নিয়েছে,’ তিনি যোগ করলেন, ‘মানুষকে চোখ বা ফুসফুসে দেওয়া যায়, কিন্তু হাসি দেওয়া যায় না।’

মুখের একটি স্নায়ুতে সমস্যা ছিল। সেটা নষ্ট হয়ে আবার নিজে নিজে মেরামত হয়ে যাবে, নাকি সেটা আর ঠিক হবে না, সে ব্যাপারে ডাক্তাররা কিছু বলতে পারছিল না। মাকে আশ্বস্ত করলাম যে আমার চেহারা প্রতিসময় না হলে কিছু যায় আসে না। যে আমি সব সময় নিজের চেহারা, পোশাক-আশাক নিয়ে চিন্তিত থাকতাম, সেই আমার এখন আমার অনেক কিছুই ঠিক নেই। আমি ঠিকমতো হাসতে বা পলক ফেলতে না পারলেও কিছু যায়-আসে না। আমি মাকে বললাম, ‘আমি এখনো আমিই আছি। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হচ্ছে, আল্লাহ আমাকে আমার জীবনটা আবার দিয়েছেন।’ তবু তারা যতবার আমাকে দেখতে হাসপাতালে আসতেন, তখন আমি হাসতাম বা হাসার চেষ্টা করতাম, তখন মায়ের মুখ এত আঁধার হয়ে যেত যেন একটা ছায়া পড়েছে। সেটা ছিল উল্টো আয়নার মতো—আমার মুখে হাসি, মায়ের মুখে নিদারুণ যন্ত্রণা।

মায়ের দিকে তাকাতেন বাবা, মায়ের চোখে থাকত—এই মেয়েটিকে তিনি পৃথিবীতে এনেছেন, এই মেয়েটি ১৫ বছর ধরে মুখে হাসি নিয়ে থেকেছে, একদিন বাবা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘পেকাই, সত্যি কথা বল। তোমার কি মনে হয়, এটা কি আমার দোষ?’

‘না,’ খাইস্তা তিনি উত্তর দিলেন, ‘তুমি তো মালালাকে চুরি করতে বা খুন করতে অথবা অপরাধ করতে পাঠাওনি। মহৎ একটা কারণেই এটা ঘটেছে।’

তবুও বাবা শঙ্কিত থাকলেন, ভবিষ্যতে আমি যখনই হাসব, সেটা এ ঘটনাটা মনে করিয়ে দেবে। আমি যে শুধু এই দিক দিয়েই পাল্টে গিয়েছি তা না, সোয়াতে আমি খুবই সংবেদনশীল এবং নাজুক একটা বাচ্চা ছিলাম, হালকা কিছু হলেই কান্না করতাম। কিন্তু বার্মিংহামের এই হাসপাতালে ভয়াবহ যন্ত্রণাতেও আমি কোনো অভিযোগ করিনি।

আমাকে নিভৃতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্যই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাজারো অনুরোধ আসা সত্ত্বেও অভ্যাগতদের প্রবেশ করার অনুমতি দেয়নি। আমার বাবা-মা এসে পৌঁছবার চার দিন পর আমাকে সাহায্য করা তিনটি দেশের রাজনীতিবিদ হাসপাতালে এলেন। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিক, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ এবং আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন যায়েদ। আমার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি না পেলেও ডাক্তাররা তাঁদের আমার ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত খবরাখবর দিলেন। তাঁরা আমার বাবার সঙ্গে দেখা করলেন। মন্ত্রীদের এই সফরে বাবা দুঃখ পেয়েছিলেন, কারণ রেহমান মালিক তাঁকে বলেছিলেন, ‘মালালাকে বলবেন সে যাতে জাতির উদ্দেশে একটা হাসি উপহার দেয়।’ তিনি জানতেন না, আমি এই একটা কাজই করতে অক্ষম।

রেহমান মালিক জানালেন যে আমার হামলাকারী হলো আতাউল্লাহ খান নামের একজন তালেবান সদস্য। ২০০৯ সালে তাকে সামরিক অভিযানের সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, কিন্তু তিন মাসের মাথায় সে মুক্তি পায়। গণমাধ্যমে খবর থেকে জানা যায়, সে জেহানযেব কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানের ওপর ডিগ্রি নিয়েছে। মালিক দাবি করলেন, আমাকে গুলি করার পরিকল্পনা আফগানিস্তানে করা হয়েছিল। তিনি বললেন, ‘যে আতাউল্লাহর মাথার জন্য ১০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।’ এই ঘোষণায় আমাদের মাঝে কোনো আশা জাগল না, কারণ বেনজির ভুট্টোর খুনি, জেনারেল জিয়ার মৃত্যুর জন্য দায়ী সেই বিমান দুর্ঘটনার পেছনের মূল হোতা, প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের আততায়ী কাউকেই ধরা যায়নি।

আমি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর শুধু দুজন লোক গ্রেপ্তার হয়েছে, আমাদের প্রিয় ড্রাইভার বেচারা উসমান ভাইজান এবং স্কুলের হিসাবরক্ষক, যিনি উসমান ভাইজানের করা ফোনটি রিসিভ করেছিলেন, পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হলেও অপরাধীকে চেনার জন্য দরকার হবে বলে উসমান ভাইজানকে তখনো সেনাবাহিনীর হেফাজতে রাখা হয়েছে। সেটা নিয়ে আমাদের খুব খারাপ লাগল। কেন তারা আতাউল্লাহকে না ধরে উসমান ভাইজানকে ধরল?

জাতিসংঘ ঘোষণা করল যে তারা আমার গুলিবিদ্ধ হওয়ার এক মাস একদিন পরের একটা দিন ১০ নভেম্বরকে ‘মালালা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। আমি এর প্রতি খুব একটা মনোযোগ দিইনি, কারণ মুখের স্নায়ুটা ঠিক করতে বড় একটা অস্ত্রোপচারের জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। ডাক্তাররা বৈদ্যুতিক ঘাত দ্বারা পরীক্ষা করেও কোনো সাড়া পাননি, তাই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে অস্ত্রোপচার করা না হলে আমার চেহারাটা অবশ্যই থেকে যাবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের কাছে আমার ব্যাপারে নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য প্রদান করলেও গোপনীয়তার স্বার্থে এটি গোপন রাখেন।

১১ নভেম্বর রিচার্ড আর্ভিং নামের এক শল্যবিদের কাছে আমাকে অস্ত্রোপচারের জন্য নেওয়া হয়। তিনি আমাকে বোঝালেন যে, এই স্নায়ু আমার চেহারার বা পাশটা নিয়ন্ত্রণ করে, এর কাজ হলো আমার বাম চোখের পলক ফেলা, নাক নাড়ানো, বাম ভ্রূ ওপরে তোলা এবং আমাকে হাসতে সাহায্য করা। এই মানুষ মেরামতের কাজ এতই সূক্ষ্মভাবে করতে হয়েছিল যে প্রায় সাড়ে আট ঘণ্টা সময় লাগল। শল্যবিদ প্রথমে আমার স্কার টিস্যু এবং হাড় খণ্ডে ভর্তি ইয়ার ক্যানেল পরিষ্কার করে দেখতে পান, আমার বাম কানের পর্দা নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর তিনি টেম্পোরাল বোন থেকে খুলি পর্যন্ত মুখের স্নায়ুটা অনুসরণ করে সেখান থেকে অনেক হাড়ের টুকরো অপসারণ করেন, যেগুলো আমার চোয়ালের নাড়াচাড়ায় সমস্যা সৃষ্টি করছিল। খুলি থেকে বেরোনোর পর স্নায়ু দুই সেন্টিমিটার পর্যন্ত একেবারেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ডাক্তার সেই শূন্যস্থানটা পূরণ করার জন্য এর স্বাভাবিক অবস্থান কানের পেছনে থেকে সরিয়ে একে কানের সামনে নিয়ে আসেন।

অস্ত্রোপচারটা ভালোই হয়েছিল, যদিও বাম পাশটা একটু একটু করে কাজ করা শুরু করার জন্য প্রায় তিন মাস অপেক্ষা করতে হয়েছিল। প্রতিদিন আমার ছোট্ট আয়নাটার সামনে কিছু মুখ সম্পর্কিত ব্যায়াম করতে হতো। মি. আর্ভিং বলেছিলেন যে আর কখনোই পুরোপুরি আগের মতো না হলেও, ছয় মাস পর স্নায়ুটা কাজ করতে শুরু করবে। খুব খুশি হয়ে আবিষ্কার করলাম, আমি হাসতে পারছি এবং চোখের পলক ফেলতে পারছি এবং আস্তে আস্তে বাবা-মা আমার চেহারায় আরো নাড়াচাড়া আভাস পেলেন। চেহারাটা আমার হলেও সেটা ফেরত পেয়ে আমার বাবা-মাই বেশি খুশি হয়েছিলাম। পরে মি. আর্ভিং বলেছিলেন যে ২০ বছরে তিনি মুখের স্নায়ুর যত অস্ত্রোপচার করেছেন, তার সর্বোৎকৃষ্ট ফলাফল তিনি আমার মুখে দেখতে পাচ্ছেন, এটা ৮৬ শতাংশ সেরে গেছে।

আরেকটি ভালো ফলাফল হিসেবে আমার মাথাব্যথা চলে গেল এবং আমি আবারও পড়তে শুরু করলাম। গর্ডন ব্রাউনের পাঠানো বইয়ের স্তূপ থেকে ‘ওজের জাদুকর’ তুলে নিয়ে পড়তে শুরু করলাম। ডরোথি বাড়ি ফেরার চেষ্টায় থাকার পরও পথে থেমে ভীতু সিংহ আর জংধরা টিনের লোককে সে কীভাবে সাহায্য করে, সেটা পড়তে আমার খুব ভালো লাগল। তার গন্তব্যে পৌঁছাতে তাকে অনেক বাধাবিপত্তি পেরোতে হয়েছিল। আমি ভাবলাম, নিজের কোনো লক্ষ্য থেকে থাকলে, সেই পথে অনেক বাধাও থাকবে, কিন্তু আমাকে চালিয়ে যেতেই হবে। আমি এভাবে একের পর এক বই পড়তে লাগলাম। আর উত্তেজিত হয়ে বাবাকে বই পড়ার কথা বলতাম। তিনি খুব খুশি হতেন, কারণ তার মনে হলো, আমি এভাবে এত সূক্ষ্ম ব্যাপার মনে রেখে বর্ণনা করতে পারছি, তবে আমার স্মৃতিশক্তি নিশ্চয়ই ভালো আছে।

আমি জানতাম, বাবা-মা আমার স্মৃতিশক্তি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, কারণ আমি তাঁদের বলেছিলাম যে দুর্ঘটনার দিনের ব্যাপারে আমার কিছুই মনে পড়ে না। একদিন আমার বাবা জিজ্ঞেস করলেন, “মালালা তুমি কি কিছু ‘পশতু তাপেই’ গেয়ে শোনাতে পারবে?” আমি আমাদের পছন্দের একটি পঙ্ক্তি আবৃত্তি করে শোনালাম। ‘সাপের লেজের মাথা থেকে যাত্রা শুরু করলে, বিষের সাগরে গিয়ে যাত্রা শেষ হবে।’ এর মাধ্যমে আমরা বুঝি যে প্রথম প্রথম পাকিস্তনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জঙ্গিদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে এখন আর সামাল দিতে পারছে না। এরপর আমি বললাম, “আসলে আমি একটি ‘তাপেই’ পুনর্লিখন করতে চাই।”

বাবা বললেন, ‘তাইপে হলো আমাদের সমাজের শতবর্ষের পুরাতন প্রজ্ঞার ফসল। এগুলো বদলানো যায় না।’ তিনি আরো জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোনটা বদলাতে চাও।’

আমি বললাম, ‘হে দেশ পুরুষরা যদি যুদ্ধে জিততে না পারে তবে নারীরা এগিয়ে এসে তোমাদের সম্মান এনে দেবে।’ আমি এই তাইপেকে বদলে এই রূপ দিতে চাইলাম, ‘হে দেশ পুরুষরা যুদ্ধে জয়ী হোক আর পরাজিত হোক, নারীরা আসছে এবং নারীরাই তোমাদের সম্মান এনে দেবে।’ বাবা হেসে বরাবরের মতো সবাইকে এটা বলে শোনালেন। আমি জিমে পরিশ্রম করলাম এবং হাত-পায়ের অঙ্গ সঞ্চালন পুরোপুরি চালু করার জন্য একজন ফিজিওথেরাপিস্টের সঙ্গে কাজ করলাম। এর পুরস্কারস্বরূপ ডিসেম্বর ৬ তারিখে আমাকে প্রথমবারের মতো হাসপাতালের বাইরে বেড়াতে নেওয়া হলো।

আমি ঈমাকে বলেছিলাম, আমি প্রকৃতি ভালোবাসি, তাই তিনি হাসপাতালে অদূরে বার্মিংহাম বোটানিক্যাল গার্ডেনে আমাকে এবং আমার মাকে নিয়ে যেতে দুজন স্টাফের ব্যবস্থা করলেন। বাবাকে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি, কারণ তিনি মিডিয়ায় পরিচিত ব্যক্তিত্ব হওয়ায়, কেউ না কেউ তাঁকে চিনে ফেলার আশঙ্কা ছিল। তবু আমি খুব খুশি ছিলাম, প্রথমবারের মতো বাইরের দুনিয়ার কাছে ফিরতে পারছি, ইংল্যান্ড এবং বার্মিংহাম দেখছি।

তারা আমাকে গাড়িতে জানালার পাশে নয়, গাড়ির মাঝে বসতে বলল, আমি বিরক্ত হলাম, কারণ এ দেশের সবকিছু আমি দেখতে চাইছিলাম। তখন বুঝিনি যে তারা আমার মাথাকে আঘাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। বাগানের ঢুকে গাছপালা চোখে পড়তেই সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির কথা মনে পড়ে গেল।

আমি শুধু বলছিলাম, ‘এটা আমাদের উপত্যকায় আছে, আর ওটাও আমাদের আছে।’ আমি আমার উপত্যকার এসব সুন্দর সুন্দর গাছপালা নিয়ে খুব গর্ব করলাম। সে সময় অন্য লোকজনকে দেখে কেমন অস্বস্তি লাগছিল, তাদের জন্য ওটা সাধারণ একটা বেড়ানোর সময় ছিল। নিজেকে যাত্রা শেষের ডরোথি মনে হলো। মা তো উত্তেজনায় বাবাকে ফোন করে ফেললেন। প্রথমবারের মতো আমি আজ খুশি। মা বললেন। কিন্তু আবহাওয়া ছিল বরফের মতো ঠান্ডা, তাই আমরা ক্যাফেতে গিয়ে মজাদার চা এবং কেক আর ক্রিম টি নামক কিছু একটা খেলাম।

এর দুদিন পর আমি পরিবারের বাইরের একজন অতিথির দেখা পেলাম—পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসিফ জারদারির। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চায়নি যে তিনি আসুন, কারণ মিডিয়া জানতে পারলেই পাগলামি শুরু হবে, কিন্তু বাবার পক্ষে অস্বীকৃত জানানো কঠিন ছিল। জারদারি যে কেবল আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান তাই নয়, তিনি বলেছিলেন যে সরকার আমার চিকিৎসার সব খরচ বহন করবে, যার পরিমাণ সব মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ পাউন্ড। হোস্টেল থেকে আমার বাবা-মাকে সরিয়ে এনে সরকার বার্মিংহামের কেন্দ্রে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে তাঁদের রেখেছে। ৮ ডিসেম্বর শনিবারে তাঁরা এলেন, আর পুরো ব্যাপারটা ছিল জেমস বন্ডের চলচ্চিত্র থেকে উঠে আসা কোনো কাহিনীর মতো।

অনেক আগে থেকেই বাইরে সাংবাদিকরা ভিড় করেছিলেন, স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা ভেবেছিলেন যে রাষ্ট্রপতিকে হাসপাতালের ভেতর আমার কাছে আনা হবে। তার পরিবর্তে আমাকে হুডওয়ালা বড় একটি বেগুনি রঙের পার্কা পরিয়ে স্টাফদের প্রবেশপথ দিয়ে হাসপাতালের অফিসে নিয়ে যাওয়া হলো, সাংবাদিক আর আলোকচিত্রীদের পাশ কাটিয়েই গেলাম আমরা, যাদের কেউ কেউ গাছের ওপর উঠে তৈরি ছিল, কেউ খেয়ালই করল না। এরপর আমি অফিসে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম, আর প্রথমবার খেলা সত্ত্বেও এলফ বোলিং নামের একটি কম্পিউটার গেমে আমার ভাই অতলকে হারাচ্ছিলাম। জারদারি এবং তাঁর দল দুটো গাড়ি নিয়ে এসে পৌঁছলে তাঁদের পেছন দিয়ে ঢোকানো হয়। চিফ অব স্টাফ, সামরিক সেক্রেটারি এবং লন্ডনের পাকিস্তান হাইকমিশনারসহ প্রায় ১০ জন লোক তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন। আমার বাবা-মা ছিলেন সেখানে, আরো উপস্থিত ছিলেন আমার অফিশিয়াল অভিভাবক ড. ফিওনা।

রাষ্ট্রপতিকে ডাক্তাররা প্রথমেই বলে দিলেন, যাতে তিনি আমার চেহারার কথা উল্লেখ না করেন। এরপর তিনি আমার চেয়ে কয়েক বছরের বড়, তাঁর সর্বকনিষ্ঠ মেয়ে আসিফাকে নিয়ে আমাকে দেখতে এলেন। তাঁরা আমার জন্য একটি ফুলের তোড়া এনেছিলেন। আমাদের সংস্কৃতি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট আমার মাথা ছুঁলেন, কিন্তু আমার বাবার দুশ্চিন্তা হলো কারণ মাথার ওপর ছিল শুধু চামড়া, মগজকে রক্ষা করার জন্য খুলির একাংশ ছিল না। প্রেসিডেন্ট বাবার সঙ্গে বসলে, বাবা তাঁকে বললেন, আমাকে যে যুক্তরাজ্যে আনা হয়েছে, এটা আমার সৌভাগ্য। সে পাকিস্তানে থাকলে হয়তো বেঁচে যেত, কিন্তু এই পুনর্বাসন সে পেত না, আর তার দেহ বিকৃত হয়ে যেত, এখন ওর মুখের হাসি ফিরে আসবে।

জারদারি হাইকমিশনারকে নির্দেশ দিলেন, যাতে বাবাকে এডুকেশন অ্যাটাশে হিসেবে একটা চাকরি দেয়, এতে তিনি খেয়েপরে চলার মতো বেতন পাবেন, আর যাতে একটি কূটনৈতিক পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে। এতে তাঁর আর রাজনৈতিক আশ্রয় খোঁজা লাগবে না। গর্ডন ব্রাউন জাতিসংঘের দৃষ্টিকোণ থেকে বাবাকে তাঁর উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব দিলেন, যেটা একটা অবৈতনিক পদ এবং জারদারি তাঁকে দুটো কাজই করার অনুমতি দিলেন। এটার পর জারদারি আমাকে মিডিয়ার কাছে পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য কন্যা এবং পাকিস্তানের কৃতিত্ব বলে উল্লেখ করলেন। কিন্তু তখনো পাকিস্তানের সবার মনোভাব ইতিবাচক ছিল না। বাবা আমার কাছ থেকে খবরটা গোপন রাখার চেষ্টা করলেও আমি জেনে গেছি, কেউ কেউ বলছিল বাবাই আমাকে গুলি করেছেন অথবা আমি গুলিবিদ্ধ হইনি এবং আমরা বিদেশে জীবনযাপন করার জন্য এই নাটক সাজিয়েছি।

পরিবারের সঙ্গে থাকার জন্য জানুয়ারির শুরুতেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাই। তাই ২০১৩ সালের শুরুটা খুব আনন্দের হলো। পাকিস্তান হাইকমিশন বার্মিংহামের কেন্দ্রে একটি আধুনিক চত্বরের কাছে আমাদের জন্য সুসজ্জিত অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করেছিল। ভবনটি ছিল ১০ তলা, আমরা কেউই আগে কখনো এত উঁচুতে উঠিনি। আমি মাকে একটু ক্ষেপালাম, কারণ ভূমিকম্পের পর আমরা একটি তিনতলা দালানে ছিলাম পাকিস্তানে। তখন মা বলেছিলেন যে তিনি আর কখনো উঁচু ভবনে থাকবেন না। এখানে আসার পর মা এতই ভয় পেয়েছিলেন যে বলেছিলেন, তিনি এই লিফটেই মারা যাবেন।

পরিবারের সবাই আবারও এক হতে পেরে আমরা খুবই খুশি হলাম। আমার আরোগ্যলাভের জন্য অপেক্ষা করতে করতে, এক জায়গায় আটকে থাকতে থাকতে, স্কুল এবং বন্ধুদের থেকে দূরে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছে আমার ভাই খুশাল। যদিও অতল নতুন জিনিসপত্র দেখে খুব উত্তেজিত, আমি শিগগির বুঝতে পারলাম এখন আমি তাদের সঙ্গে যেমন ইচ্ছা আচরণ করতে পারি, আমাকে বকা দেওয়া হবে না। খুব শীত ছিল, আর বড় বড় কাচের জানালা দিয়ে বাইরের তুষারপাতের দৃশ্য দেখে বাড়ির মতো দৌড়ে দৌড়ে বরফকুচি ধরতে ইচ্ছে হতো। আমরা মাঝেমধ্যে আমার শক্তি ফিরে পেতে হাঁটতে যেতাম, যদিও আমি সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়তাম।

চত্বরে একটা ঝর্ণা আর কাচের দেয়ালঘেরা সস্তা কফিবার ছিল, সেখানে গিয়ে দেখা যেত পুরুষ আর নারীরা একত্রে কথা বলছে আর এমনভাবে মিশছে, যা সোয়াতে অকল্পনীয়। অ্যাপার্টমেন্ট ছিল ব্রড স্ট্রিট থেকে একটু দূরে। রাস্তাটি দোকান ছাড়াও নাইটক্লাব আর স্ট্রিপবারে ভর্তি। আমরা দোকানে যেতাম, যদিও আমি শপিং পছন্দ করি না। সবার সঙ্গে যখন দোকানে যেতাম, তখন রাতের বেলা নারীদের পরনের সংক্ষিপ্ত পোশাক দেখে আমাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যেত। প্রায় ইয়া উঁচু উঁচু হিল পরে শীতকালের মাঝেও তারা চলাফেলা করে। এসব দেখে মা এত আঁতকে গেলেন যে আমাদের সাবধান করে দিলেন, রাতের দিকে আমরা যেন এই স্ট্রিটে না আসি। বাবাকেও অনুনয় করে বলতেন, ‘দয়া করে আমাকে দুবাই নিয়ে যাও,’ আমি হাসতাম। ‘তাদের পা কি লোহার তৈরি যে ঠান্ডা লাগে না?’ মা জিজ্ঞেস করতেন।

ব্রড স্ট্রিট ছুটির রাতগুলো বিপজ্জনক হওয়ায় সেসব দিনে আমাদের রাতে বের না হতে সতর্ক করে দেওয়া হলো। আমাদের কাছে এটা হাসক্যর মনে হলো। আমরা যেখান থেকে এসেছি তার সঙ্গে তুলনা করে এ জায়গা কীভাবে অনিরাপদ হয়? তালেবান কি এখানে মানুষের মাথা কাটছে? বাবা-মাকে বলিনি, কিন্তু কোনো এশিয়ান চেহারার লোক কাছাকাছি এলেই আমি পিছিয়ে যেতাম, মনে হতো, সবার কাছেই বন্দুক আছে।

সপ্তাহে একদিন আমি আমার মিঙ্গোরার বন্ধুদের সঙ্গে স্কাইপে কথা বলতাম। তারা আমাকে বলল যে এখানে ক্লাসে আমার জন্য একটি আসন ফাঁকা রাখা হয়। আমার গুলিবিদ্ধ হওয়ার দিনে পাকিস্তানে পরিচিত রক্তমাখা খাতাটা শিক্ষক ক্লাসে নিয়ে এসেছিলেন। আমি ৭৫-এ ৭৫ পেয়েছিলাম, কিন্তু পরের পরীক্ষাগুলো তো আর কখনোই দেওয়া হয়নি। তাই মালকা-ই-নূর প্রথম হয়েছে যদিও হাসপাতালে আমার কিছু লেখাপড়া হচ্ছিল, আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছিল যে আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। এখন মালকা-ই-নূর ও মনিবার মাঝে প্রতিযোগিতা হয়। তোমাকে ছাড়া প্রতিযোগিতা করতে বিরক্ত লাগে, মালকা-ই-নূর আমাকে বলেছে।

দিনে দিনে আমি শক্তি ফিরে পেলেও আমার অস্ত্রোপচার শেষ হয়নি। আমার খুলির ওপরের অংশটা তখনো খালি ছিল। ডাক্তাররা আমার শ্রবণশক্তির ব্যাপারেও উদ্বিগ্ন ছিলেন। হাঁটতে গেলে ভিড়ের মাঝে আমি মা-বাবার কথা শুনতে পেতাম না। আর আমার কানের ভেতর একটা টিনের মতো শব্দ হতো, যেটা শুধু আমিই শুনতে পেতাম। ২ ফেব্রুয়ারি শনিবার আবারও অস্ত্রোপচার হলো। এটি করলেন ডক্টর অ্যানওয়েন হোয়াইট। প্রথমে তিনি আমার পাকস্থলী থেকে খুলির হাড়টা সরালেন, কিন্তু সেটার দিকে তাকিয়ে তখনই প্রতিস্থাপন না করার সিদ্ধান্ত নিলেন, কারণ অবস্থা বেশি ভালো ছিল না আর সংক্রমণের আশঙ্কা ছিল। এর পরিবর্তে তিনি টাইটেনিয়াম ক্র্যানিওপ্লাস্টি লাগানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। জিনিসটি খুলির মতোই আমার মগজকে রক্ষা করবে।

এই অস্ত্রোপচারের সময় আমার মুখের স্নায়ুর অস্ত্রোপচারকারী মি. আর্ভিং আমার বাম কানের নষ্ট পর্দাটার জন্য একটা ব্যবস্থা করলেন। ছোট একটা বৈদ্যুতিক যন্ত্র তিনি আমার কানের কাছে মাথার ভেতর বসিয়ে দিলেন, বললেন যে এক মাসের মধ্যেই সেগুলো আমার মাথার বাইরের অংশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবে এবং আমি শুনতে পাব। আমি পাঁচ ঘণ্টার মতো অপারেশন থিয়েটারে ছিলাম। কিন্তু মনেই হলো না যে আমার বড় কোনো অস্ত্রোপচার হয়েছে এবং পাঁচ দিনের মধ্যেই অ্যাপার্টমেন্টে ফিরতে পারলাম। কানের পেছনে রিসিভার লাগানোর কয়েক সপ্তাহ পর প্রথমবারের মতো বিপবিপ শব্দ শুতে পেলাম। শুরুতে সব শব্দ রোবটের মতো মনে হলেও এর উন্নতি ঘটতে থাকল।

আমরা মানুষেরা বুঝি না, আল্লাহ কত মহান। তিনি আমাদের অসাধারণ একটি মস্তিষ্ক এবং সংবেদনশীল প্রেমময় একটি হৃদয় দিয়েছেন। কথা বলতে এবং ভাব প্রকাশ করতে তিনি আমাদের দুটো ঠোঁট দিয়েছেন। পৃথিবীর রং এবং সৌন্দর্য অবলোকন করতে দুটো চোখ দিয়েছেন, জীবনের পথে হেঁটে যাওয়ার জন্য দুটো পা দিয়েছেন, কাজ করার জন্য দুটো হাত দিয়েছেন, সুঘ্রাণ নেওয়ার জন্য একটি নাক দিয়েছেন, সুমিষ্ট বাণী শোনার জন্য দিয়েছেন দুটি কান। কেউ তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারানোর আগে কখনোই বোঝে না প্রতিটির মাঝেই কতটা ক্ষমতা লুকিয়ে আছে।

আমি কঠোর পরিশ্রম করা ডাক্তার, আমার বাবা এবং যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার স্থান এই পৃথিবীর বুকে আম্মাকে পাঠানোর জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই। কেউ কেউ ভালো পথ বেছে নেয়, কেউ খারাপ। এক ব্যক্তির বুলেট আমাকে আহত করল। সেটা এক সেকেন্ড মাঝে এবং মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত করল, শ্রবণশক্তি কেড়ে নিল এবং আমার মুখের পাশের স্নায়ুতন্তু নষ্ট করে দিল। আর সেই এক সেকেন্ড পরেই লাখ লাখ মানুষ আমার জীবনের জন্য এবং আমার জীবন ফিরিয়ে দেওয়া অসাধারণ ডাক্তারদের জন্য প্রার্থনা করতে লাগল। আমি ভালো মেয়ে। আমার মনে কেবল মানুষকে সাহায্য করার ইচ্ছা। সেটা অ্যাওয়ার্ড আর অর্থের জন্য নয়। আমি সব সময় সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে থাকি। আমি মানুষকে সাহায্য করতে চাই।

এক তালেবান পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে ভ্যানের তিনটি মেয়েকে গুলি করল এবং একটি মেয়েও মারা যায়নি। শুনতে মনে হয় অবিশ্বাস্য একটি কাহিনী। মানুষ বলে যে আমি অলৌকিকভাবে আরোগ্য লাভ করেছি। আমার বন্ধু শাজিয়া দুবার আঘাত পেয়েছে, সে ওয়েলসের আটলান্টিক কলেজ থেকে স্কলারশিপের প্রস্তাব পেয়ে যুক্তরাজ্যে এসেছে এবং আমি আশা করছি, এরই মধ্যে কায়নাতও আসবে। আমি জানি, আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন। এ জীবনকে মনে হয় দ্বিতীয় জীবন। মানুষ আমার জন্য স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করেছেন এবং আমি কেবল এ কারণেই জীবন ফিরে পেয়েছি। তার পরও অনেকে বলাবলি করেন, তালেবানের একটি মেয়েকে গুলি করা, এটি একটি গল্প মাত্র। কিন্তু না, এটা গল্প নয়।

(চলবে) 

আমি মালালা বলছি

পাঠকের পছন্দ

গরমে ঘামাচিতে জেরবার?

ভ্রমণের সময় যা মনে রাখবেন

কীভাবে হবেন ভালো সহকর্মী?

সর্বাধিক পঠিত
  1. আসছে এ পি জে আবদুল কালামের বায়োপিক, নায়ক ধানুশ
  2. অক্ষয়ের মামলা, সুদসহ টাকা ফেরত দিয়ে ‘হেরা ফেরি ৩’ ছড়ালেন পরেশ রাওয়াল
  3. শুধু অভিনেতা নন, পেশাদার পাইলটও ছিলেন মুকুল দেব
  4. বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই ঘরবন্দি ছিলেন মুকুল দেব
  5. পরেশ রাওয়ালের বিরুদ্ধে ২৫ কোটির মামলা ঠুকলেন অক্ষয় কুমার
  6. টিজারেই ঝড় তুলল ‘ওয়ার ২’, মুক্তির তারিখ ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত

আসছে এ পি জে আবদুল কালামের বায়োপিক, নায়ক ধানুশ

অক্ষয়ের মামলা, সুদসহ টাকা ফেরত দিয়ে ‘হেরা ফেরি ৩’ ছড়ালেন পরেশ রাওয়াল

শুধু অভিনেতা নন, পেশাদার পাইলটও ছিলেন মুকুল দেব

বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই ঘরবন্দি ছিলেন মুকুল দেব

পরেশ রাওয়ালের বিরুদ্ধে ২৫ কোটির মামলা ঠুকলেন অক্ষয় কুমার

ভিডিও
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
গানের বাজার, পর্ব ২৩৩
জোনাকির আলো : পর্ব ১২৩
নাটক : প্রেম আমার
নাটক : প্রেম আমার
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৬
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৬
আলোকপাত : পর্ব ৭৭৫
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, পর্ব : ১২
এই সময় : পর্ব ৩৮২১
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৬
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৬
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫০
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫০

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Browse by Category

  • About NTV
  • Career
  • NTV Programmes
  • Advertisement
  • Web Mail
  • NTV FTP
  • Satellite Downlink
  • Europe Subscription
  • USA Subscription
  • Privacy Policy
  • Terms & Conditions
  • Contact
  • Archive

NTV Prime Android App

Find out more about our NTV: Latest Bangla News, Infotainment, Online & Live TV

Qries

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited. All rights reserved

x