দাউদকান্দিতে ডেঙ্গু আতঙ্ক, কুমিল্লা জুড়ে বাড়ছে সংক্রমণ

কুমিল্লায় মহামারি রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্তরা শুরুতে পরীক্ষা না করেই স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। পরে অবস্থা গুরুতর হলে ছুটছেন হাসপাতালে।
কুমিল্লা স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলায় এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু দাউদকান্দি উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দেড় শতাধিক ছাড়িয়েছে। সেখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪ নারী ও ১ পুরুষ মারা গেছেন।
পরিবেশ ও কৃষি সংগঠক মতিন সৈকত জানান, দাউদকান্দির খাল-বিল ও মহাসড়কের পাশে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে মশা বেড়েছে। এছাড়া শুরুতেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোনও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
চিকিৎসক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, দাউদকান্দি পৌর এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ঈদের পর দীর্ঘ সময় সঠিকভাবে পরিষ্কার না করায় এডিস মশার বিস্তার বেড়েছে।
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান জানান, গেলো কয়েক দিন ধরে প্রতিদিন ৮০-১০০ জন ডেঙ্গু রোগী আসছেন। তিনি বলেন, এখন সচেতনতার বিকল্প নেই, আমরা চিকিৎসা ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায়ও তেমন কোনো ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম নেই বলে অভিযোগ করছেন নগরবাসী।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুল হাকিম জানান, গণমাধ্যমে দাউদকান্দিতে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দেখলেও কুমিল্লা শহরে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখছেন না।
ঝাউতলা এলাকার মুমিনুল ইসলাম বলেন, দাউদকান্দিতে আমার মেয়ের স্বামী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল। এই অবস্থা কুমিল্লা শহরে শুরু হলে কী হবে ভাবতেই ভয় লাগে।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের আমির হোসেন জানান, এখন আর এলাকায় ফগার মেশিন দেখা যায় না, তারা কয়েল আর মশারি দিয়েই মশা প্রতিরোধের চেষ্টা করছেন।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর মোহাম্মদ বশির আহমেদ বলেন, দাউদকান্দিতে অন্তত ১ হাজার ৫০০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এবং চারজন মারা গেছেন। আক্রান্তদের বেশিরভাগই বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে শনাক্ত হয়েছেন। সংক্রমণ কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার জানান, সংক্রমিত এলাকাগুলোর খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং উপজেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ এডিস মশা নিধনে জোরদার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।