কনুইয়ে ব্যথার রোগে কী করবেন?

টেনিস এলবো হচ্ছে এমন ধরনের দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা যার কারণে কনুইয়ে ব্যথা ও দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। টেনিস এলবো যে শুধু টেনিস খেলোয়াড়দেরই হবে, তা নয়। যেসব কাজে কনুই থেকে কবজি অবধি ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, সে সব পেশার মানুষেরও হতে পারে। ওয়াসার পাইপলাইনের মিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, চানাচুর ওয়ালা এরাও রোগটির শিকার হতে পারে।
যে কারণে হয়
রোগটি আসলে সঠিক কী কারণে হয় তা জানা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হয়, হাতের ওপরের অংশের হাড় বা হিউমেরাসের নিম্ন প্রান্তের সংযুক্ত পেশিগুলো আংশিক ছিঁড়ে গেলে, নিচের অংশের হাড়-রেডিয়াসের লিগামেন্ট ক্ষয়প্রাপ্ত হলে, রেডিয়াস ও হিউমেরাসের অস্থি-সন্ধিতে প্রদাহ হলে বা ওই সন্ধিস্থলে সরবরাহকারী রক্তনালির প্রদাহ হলে রগটি দেখা দিতে পারে। আবার সার্বক্ষণিক মাংসপেশির সংকোচনের ফলে অস্থির আবরণীতে প্রদাহ হলেও ব্যথা হতে পারে।
লক্ষণ কী
কনুইয়ে ব্যথাটি দেখা দেয় ধীরে ধীরে। ব্যথাটা মূলত হবে কনুইয়ের বাইরের পাশটায়, হতে থাকবে সার্বক্ষণিক অথবা বিরামহীন একধরনের অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়বে কবজি অবধি, আর হাত চিত করে কোনো কিছু মুঠোয় চেপে ধরতে গেলে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যাবে। সামনে অথবা বাইরের পাশ থেকে আঙুল দিয়ে কনুইয়ের অস্থিতে চাপ প্রয়োগে ব্যথা অনূভূত হবে। এ রোগের কারণে হাত মুঠো করে কোনো কিছু চেপে ধরতে গিয়ে শক্তিহীনতার অনুভূতি হওয়া, এমনকি ভারী কিছু ধরা জিনিস হাত থেকে পড়েও যেতে পারে। এ রোগে কনুইয়ে ফুলে যাওয়ার প্রবণতা অবশ্য কদাচিত দেখা যায়। কনুইয়ের নড়াচড়ায় তেমন কোনো অসুবিধা টের পাওয়া যায় না।
রোগনির্ণয়
টেনিস এলবো বোঝার উপায়
কনুইয়ে ব্যথা ও দুর্বলতা অবশ্য অনেক কারণেই হতে পারে। তবে এটি যে আসলেই টেনিস এলবোজনিত সেটি বুঝতে একটি পরীক্ষা করা যেতে পারে। প্রথমে কনুইকে সোজা করে, কবজি অবধি হাতের অংশকে উপুড় করতে হবে। এ অবস্থায় জোর করে কবজি ভাঁজ করলে কনুইয়ে ব্যথা অনুভূত হবে। এরপর কবজি আবার জোর করে উল্টোদিকে ভাঁজ করে শক্তির বিপরীতে কবজি থেকে কনুই অবধি চিত করতে গেলে টেনিস এলবোজনিত ক্ষতের জায়গায় ব্যথার তীব্রতা ও অস্বস্তি আরো বেড়ে যাবে।
পরীক্ষা বা এক্স-রে করে তেমন কিছু বোঝার উপায় নেই, যেহেতু কনুই সংযুক্ত পেশি আংশিক ছিন্ন এবং এক্স-রেতে এটি বোঝার কথা নয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন অস্থি-পিণ্ড ও এবড়ো-খেবড়ো অস্থি আবরণী এক্স-রেতে বোঝা যেতে পারে। যা রোগ নির্ণয়ে কখনো কখনো সহায়ক হয়।
চিকিৎসা
কনুইকে একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত বিশ্রাম দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কনুইয়ের কাস্ট বা স্পিলিন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। সঙ্গে কনুইয়ে হালকা গরম সেঁক। শর্ট ওয়েভ ডায়াথার্মি, আলট্রা-সাউন্ড থেরাপি এবং রেডিয়েশন থেরাপিও ক্ষেত্রবিশেষে দেওয়া যেতে পারে। বেদনানাশক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এই প্রাথমিক প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর হলেও উপসর্গের পুনরাবৃত্তি প্রায়ই ঘটতে পারে।
রোগ জটিল আকার ধারণ করলে দ্রুত ও দীর্ঘমেয়াদি উপসর্গ মুক্তির উপায় হলো অপারেশন। সময়মতো, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে, টেনিস এলবো থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও অর্থোপেডিক এবং স্পাইন সার্জন, নিটোর (পঙ্গু হাসপাতাল), ঢাকা